বিজ্ঞাপন:
 
সংবাদ শিরোনাম:
আমার বাবা ইসলামের জন্য কাজ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন: নিহত জামায়াত কর্মীর ছেলে আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে: মোস্তফা কামাল সুন্দরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করল ছাত্রশিবির প্রণোদনা পাবেন লালমনিরহাটসহ উত্তর বঙ্গের আলু চাষিরা বিচারকের ছেলে হত্যাকারী কে এই বিএনপি নেতার ছেলে লিমন অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে হামলার শিকার তিন পুলিশ সদস্য ‘দেশি মুরগি খেতে না পারা’ সেই শিক্ষিকা সম্পর্কে মিললো ভিন্ন তথ্য গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে বিএনপি’র সতর্ক অবস্থান রাজধানীসহ সারাদেশের ৫ জায়গায় যানবাহনে আগুন চরফ্যাশনে ভয়াল ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস পালিত
দেশ যখন কাঁদে, তখন বুক চিতিয়ে দাঁড়ান সেনাসদস্যরা

দেশ যখন কাঁদে, তখন বুক চিতিয়ে দাঁড়ান সেনাসদস্যরা

অনলাইন ডেস্ক:: ২১ জুলাই ২০২৫—এক ভয়াবহ দুপুর। রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস চলাকালীন সময় হঠাৎই আছড়ে পড়ে একটি বিমান। মুহূর্তেই স্কুল ভবনের একাংশ আগুনের লেলিহান শিখায় ছারখার হয়ে যায়। চারদিকে আতঙ্ক, কান্না, ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর হাহাকার। কেউ দৌড়াচ্ছে, কেউ কাঁদছে, কেউ নিথর পড়ে আছে মাটিতে—এ যেন বাস্তব নয়, যেন সিনেমার ভয়াবহ কোনো দৃশ্য।


তবে এই ট্র্যাজেডির ভয়াবহতা ছাপিয়ে উঠে আসে দুই সাহসী সেনাসদস্যের নির্ভীক বীরত্ব—একজনের নাম শেখ কামরুজ্জামান স্কাই, আরেকজন নাম না-জানা, কিন্তু হৃদয়ে চিরস্মরণীয়।

কোনো নির্দেশ—তবুও ছিল দায়িত্ববোধ, ছিল মানুষের প্রতি ভালোবাসা, আর বিপন্ন প্রাণের পাশে দাঁড়ানোর অদম্য সংকল্প।

একজন ‘স্কাই’—যিনি শুধু কণ্ঠ নয়, ছিলেন আশার ছায়া হয়ে পাশে!

সেনাবাহিনীর তরুণ সদস্য শেখ কামরুজ্জামান স্কাই। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন ঘটনাস্থলে এবং নিজে থেকেই হাত বাড়িয়ে দাঁড়ান মানুষদের পাশে। এক হাতে হ্যান্ড মাইক, অন্য হাতে পানি বা সহায়তার হাত—তিনি সেদিন একাই যেন প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন গোটা এলাকায়।

দুপুর থেকে রাত অবধি তাকে দেখা যায় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে দৌড়াতে, আহতদের পাশে দাঁড়াতে, রক্ত জোগাড় করতে। বারবার তার মুখে শোনা গেছে সেই বেদনাঘন চিৎকার:

“রক্ত লাগবে, রক্ত! ইমারজেন্সি নেগেটিভ ব্লাড লাগবে! ভাইয়েরা কেউ কি আছেন? দ্রুত ঢাকা মেডিকেল, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছান!”

ঘেমে ভেজা শরীর, মুখে ধুলোর ছাপ—তবুও চোখে ক্লান্তির লেশমাত্র নেই। বরং তাতে ছিল দায়িত্বের দৃঢ়তা ও মানুষের জন্য এক অফুরন্ত ভালোবাসা।

শেখ কামরুজ্জামান স্কাই-এর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে। শৈশব কেটেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বামনালী গ্রামে নানা বাড়িতে। কঠোর পরিশ্রম আর ত্যাগে গড়া জীবন তাঁর। বর্তমানে তিনি ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে দায়িত্বে আছেন।

অপরিচিত সেই সেনাসদস্য—নীরব বীরত্বের নাম!

দ্বিতীয় ছবির সেনাসদস্যটির নাম আমাদের অজানা। কিন্তু তাঁর কাজ তাঁকে অমর করে তুলেছে মানুষের মনে।

এক ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়—তিনি কোলে করে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন একটি আতঙ্কিত স্কুলশিশুকে। সেই শিশুর চোখে-মুখে মৃত্যুভয়, কিন্তু তাঁর বুকে ছিল নির্ভরতার আশ্রয়।

এই সৈনিক কেবল দায়িত্ব পালন করেননি, বরং ছিলেন একজন প্রকৃত ভাইয়ের মতো। মানুষের ভালোবাসার জন্য যুদ্ধ করার এই নিষ্ঠা আমাদের শিখিয়ে দেয়—সেনাবাহিনী মানেই শুধু রণাঙ্গনের গর্জন নয়, দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মমতাময় হাতও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার বন্যা!

এই দুই সেনাসদস্যের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কেউ বলছে “হিরো স্কাই”, কেউ বলছেন “নিঃশব্দ বীর”, আবার অনেকে বলছেন, “এটাই তো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী—নির্বাক, ত্যাগী, মানবিক।”

একজন লিখেছেন, “এইরকম ছবি ভাইরাল হওয়া উচিত। এগুলো আমাদের শেখায়—মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আসল দায়িত্ব।”

আরেকজন লিখেছেন, “তাঁদের নাম হয়তো আমাদের মনে থাকবে না চিরকাল, কিন্তু তাঁদের কাজ ইতিহাস লিখে রাখবে।”


সেনাবাহিনীর নিঃশব্দ জয়গান:

তাঁদের কেউ ক্যামেরার জন্য কাজ করেননি।

তাঁরা নামের জন্য দৌড়াননি। তাঁরা শুধু দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন নিঃশব্দে। তাঁরা ছিলেন আশার আলো—একজন স্কাই, আরেকজন নিরব যোদ্ধা।

তাঁরা যেন আমাদের মনে করিয়ে দেন—

“দেশপ্রেম মানে শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে লড়াই নয়, দুর্যোগেও দায়িত্বশীলতা।”

“হিরো হয়ে ওঠা যায় শুধু সৎ মন, সাহস আর ভালোবাসা দিয়ে।”

এই দুই সেনাসদস্য ইতিহাসের পাতায় হয়তো বড় অক্ষরে লেখা থাকবে না, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে তাঁরা থাকবেন গর্বের গল্প হয়ে—চিরজীবী।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।
Design & Development BY : ThemeNeed.com