ফেনী প্রতিনিধি:: ফেনীতে বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে ফুলগাজী বাজার প্লাবিত হয়েছে। রোববার (১ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফুলগাজী পুরাতন পশুর হাট-সংলগ্ন স্লুইস গেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে। এতে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক প্লাবিত হয়ে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে বছর না ঘুরতেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক স্থানে ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় আতঙ্কে দিন পার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
হাসান নামে ফুলগাজী বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভারতীয় উজানের পানির কারণে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে ফুলগাজী বাজারে প্রবেশ করেছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এখনো নদীর পানি বাড়ছে।
জহিরুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, গেল বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৫টি বাঁধ নামমাত্র সংস্কার হয়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বেড়েছে। এভাবে পানি বাড়লে আবারও বাঁধ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে। আমাদের দুঃখ কোনো সময়েই কাটেনি।
শাহজাহান নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, গত বছরের বন্যায় যে ক্ষতি হয়েছে তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার আগেই আবার আমাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। কিছু মানুষের দায়সারা কাজের জন্য এখানকার বাঁধের ভাঙন প্রতিবছর নিয়মে পরিণত হয়েছে।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বেড়ে পরশুরামের বিভিন্ন পয়েন্টে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত আটটি স্থানে ফাটলের দেখা দিয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বেড়েছে। বর্তমানে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার সকাল থেকেই নিয়মিত পানি বাড়ছে। ইতোমধ্যে জেলার পরশুরাম উপজেলায় ২১টি ও ফুলগাজীতে ২০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও স্লুইস গেট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে ফুলগাজী বাজার ও ফেনী-পরশুরাম সড়কে পানি উঠেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গেল বছরের জুলাই-আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনীর জনপদ। বিশেষ করে ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ওই বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। এই বন্যায় প্রাণ হারান ২৯ জন। এ ছাড়া সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মোটরযান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় প্রত্যেক খাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে শত কোটি টাকা। বন্যায় গ্রাম ছাড়িয়ে ডুবেছে জেলা শহরও। পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। বন্যার্ত মানুষদের উদ্ধার ও সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল সারা দেশের হাজারো মানুষ।
Leave a Reply