স্টাফ রিপোর্টার:: অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২০ মে) শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়া উদ্দিন আহমেদের আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এদিন বেলা ২টা ৫০ মিনিটে এজলাসে তোলা হয় নোবেলকে। কয়েক মিনিট পর বিচারক তার আসন গ্রহণ করলে আসামিপক্ষের আইনজীবী জসীম আদালতের অনুমতি নিয়ে ওকালতনামায় আসামি নোবেলের স্বাক্ষর নেন। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডেমরা থানার পরিদর্শক মুরাদ হোসেন তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা ইলামনি আদালতকে জানান, ভিক্টিম রাজধানীর ইডেন কলেজের ছাত্রী। তিনি মোহাম্মদপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের সাথে তার পরিচয় হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানা এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।
নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী জসিম উদ্দিন জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, মামলার ঘটনা গত বছরের ১২ নভেম্বর। আর বাদী আসামির স্ত্রী। গতকাল রাত পর্যন্ত তারা একই বাসায় ছিলেন। ভুল বোঝাবুঝিতে মামলা করেছে। মীমাংসার জন্য নোবেলকে থানায় ডেকে নেওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। মেয়ে লিগ্যালি তার ওয়াইফ, চার মাসের প্রেগন্যান্ট। নোবেল তার সাথে সংসার করতে চায়। আমরা যেকোনো শর্তে আপস করতে ইচ্ছুক।
এ সময় বিচারক কাবিননামা আছে কি না জানতে চান। তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, তাড়াহুড়োর কারণে কাবিননামা আনা হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি এই আসামি সাংসারিক, ব্যক্তিজীবন নিয়ে ভালো অবস্থায় নেই। বাদী দাবি করেছেন, ইডেন কলেজে তিনি অধ্যয়নরত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয়। পরে ফোনে কথাবার্তা হয়। গত বছরের ১২ নভেম্বর তাদের দেখা হয়। আসামি বাদীকে তার ডেমরার স্টুডিওতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আটকে রেখে ২/৩ জনের সহায়তায় ধর্ষণ করে, মারধর করে।
জানা যায়, গতকাল সোমবার নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই তরুণী। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানা এলাকায় তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।
এরপর ১২ নভেম্বর রাত ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটক করে রাখে এবং তার মোবাইল নিয়ে নেয়। বাদী তার পরিবারের সাথে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই ছাত্রীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০-প্রো মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে। এরপর আসামি নোবেল তার বসতঘরে আটক রেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। তাই বাদী আসামীর ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, আসামি নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর থেকে গত ১৯ মে পর্যন্ত বাদীকে মারপিট করতো। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরো ২ থেকে ৩ জনের সহায়তায় বাদীকে সিঁড়ি দিয়ে চুলের মুটি ধরে টানাহেঁচড়া করে অপর একটি কক্ষে আটক করে রাখে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বাদীর পিতা-মাতা বাদীকে চিনতে পারে। এরপর তার পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে।
Leave a Reply