সবজি থেকে মুরগি, চাল থেকে তেল, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবকিছুর দাম। শীতে রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি পণ্যে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এদিকে চাল ও তেলে ২ থেকে ৩ টাকা এবং মুরগিতে বেড়েছে ৫ টাকা।
দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, কুয়াশার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজি আসতে বিঘ্ন ঘটছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের শীতকালীন সবজিই রয়েছে বাজারে। সরবরাহও ভালো। এরপরও প্রতিটি সবজিতে গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি দাম চাইছেন বিক্রেতারা।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ বাজারে আকারভেদে প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, কুমড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি শালগম ১৫ থেকে ২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বরবটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মূলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ২০ থেকে ৩০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৩০ টাকা, গাজর মানভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৫০ টাকা, করলা ৩০ টাকা, লাল টমেটো ৬০ থেকে ৮০ টাকা, সবুজ টমেটো ৩০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা আরো জানান, প্রতি আঁটি লতি বিক্রি করা হচ্ছে ২০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকা, প্রতি আঁটি লালশাক ৫ টাকা, পালংশাক ৭ টাকা, ডাঁটাশাক ৭ টাকা, লাউশাক ২৫ টাকা, বত্তশাক ১০ টাকা, সরিষার শাক ৭ টাকা, কলমির শাক ৫ টাকা, ধনিয়া ১০ টাকা। ঝাল কমেনি কাঁচা মরিচের। আগের মতোই প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।
সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা রফিক নামের এক ক্রেতা বলেন, “মাঝখানে সবজির দাম কিছুটা কমলেও, এখন আবার বাড়তি। শুধু সবজি নয়, দাম বেড়েছে চাল, তেল ও পেঁয়াজের। কিন্তু আমাদের আয় তো আর বাড়েনি। তাই বাজার করতে প্রায় সময়ই আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের হিমশিম খেতে হয়।”
হুমায়ুন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, আলু-পেঁয়াজ দুটোই প্রতি পাল্লায় (৫ কেজি) ৪০-৫০ টাকা বেড়েছে। সবজির দামও বাড়তি। মাঝে সবকিছুর দাম কমেছিল। কিন্তু এখন আবার বাড়ছে।
এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীতে সবজি আসে। কিন্তু কুয়াশার কারণে সবজি সঠিক সময়ে বাজারে ঢুকছে না। তাই দাম একটু বেড়েছে।
মাঝে আলু ও পেঁয়াজে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এখন আবার দাম বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দুটির। এখন প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা। পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা। গত সপ্তাহে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করা প্রতি পাল্লা নতুন আলু এখন বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ টাকা। পুরোনো আলু বিক্রি করা হচ্ছে ২০০ টাকা। এ আলুর পাল্লা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা।
আলুর দাম বাড়ার পেছনে বিক্রেতারা বলছেন, কাঁচামালের দাম কখন বাড়ে বলা যায় না। পণ্য এলে দাম কমে, না এলে বাড়ে।
অন্যদিকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিসরীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ টাকা, চীনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, তুর্কি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা, ডাচ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি রসুন ৮০ টাকা, বিদেশি ৯০ টাকা, দেশি আদা ৮০ এবং এলসি করা আদা ১৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।
স্বস্তি নেই চালের বাজারে। গত সপ্তাহের তুলনায় ফের ২-৩ টাকা বেড়েছে চালের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি করা হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, মোটা চালের আটাশ বিক্রি করা হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা। উৎপাদন মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৪৬ টাকা।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে চালের দাম বাড়তি। দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। এমনকি এখন স্বর্ণার নতুন চাল আসছে বাজারে। তা-ও এর দাম বেশি। মিল থেকেই আমাদের বেশি দামে চাল কিনে আনতে হয়। তাই বাড়তি দামে বিক্রি করা ছাড়া আমাদেরও কোনো উপায় নেই।
সপ্তাহের ব্যবধানে তেলের দামও বেড়েছে অনেকটা। পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতলে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বর্তমানে পাঁচ লিটারের বোতলে সেনা ব্র্যান্ডের তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৩৫ টাকা, তীর ৫৪০ টাকা, রূপচাঁদা ৫৭০ টাকা, বসুন্ধরা ৫৩০ টাকা, পুষ্টি ৫৫০ টাকা।
মুরগির দামও বেড়েছে কিছুটা। বর্তমানে বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০ টাকা, সোনালি ২২০ টাকা, লেয়ার ২৭০ টাকা, হাঁস প্রতি পিস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত আছে। দাম বাড়েনি ডিমেরও।