পাবনা প্রতিনিধি:: পাবনার চাটমোহর উপজেলার বহুল আলোচিত কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদের নির্বাচন অবশেষে স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (২১ মে) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান এবং কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার।
তিনি জানান, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক)—এই তিনটি গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
আব্দুল মতিন বলেন, “আগামী ২৪ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গ্রামের মুরব্বিদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই একটি সমঝোতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠন করা হবে।”
এ বিষয়ে চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, “নির্বাচন স্থগিতের বিষয়টি আমরা জেনেছি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা থাকায় পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত দিকে যেতে পারত। তবে গ্রামবাসী যদি আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছে একটি সর্বসম্মত কমিটি গঠন করে, সেটাই হবে সেরা সমাধান। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার চেষ্টা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সভাপতি পদের এক প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিটি। এখন যদি তারা বসে আলোচনা করে কাউকে সভাপতি বানায়—তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি আর এ বিষয়ে নেই। অনেক কথাবার্তা শুনতে হয়েছে, হুমকিও পেয়েছি। এসব আর বলতে চাই না।”
অন্য প্রার্থী, মূলগ্রাম ইউনিয়ন শ্রমিকদলের সভাপতি শরিফুল ইসলাম এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, জান্নাতুল বাকি কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সভাপতি পদে কে আসবেন—এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হলে তারা ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে গঠিত হয় সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী দুই প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেন। যাচাই-বাছাই শেষে উভয়ের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়—আবদুল কুদ্দুস পান ছাতা প্রতীক, শরিফুল ইসলামও পান ছাতা প্রতীক। দুই প্রার্থীর পোস্টারে ছেয়ে যায় গ্রাম। সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন তারা।
এ নির্বাচন ঘিরে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। স্থানীয় গণমাধ্যম থেকে শুরু করে জাতীয় সংবাদমাধ্যমেও তা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নির্বাচনটি ভাইরাল হয়ে পড়ে। তবে এই আগ্রহ ও আলোচনার পাশাপাশি দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশেষে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
Leave a Reply