নোটিশ :
► সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ।  ► আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৭৪০৬৯২৯২৩
র‍্যাব কর্মকর্তার আত্মহত্যা: ‘কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে গেল’

র‍্যাব কর্মকর্তার আত্মহত্যা: ‘কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে গেল’

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হওয়া র‍্যাবের কর্মকর্তা পলাশ সাহার স্বজনের আহাজারি। বৃহস্পতিবার সকালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় তাড়াশি গ্রামেছবি: প্রথম আলো
‘তোরা আমাকে আমার বাবার কাছে নিয়ে যা। আমি বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখি। কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’

কথাগুলো বলছিলেন আর বিলাপ করছিলেন চট্টগ্রামে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় লাশ উদ্ধার হওয়া র‍্যাবের কর্মকর্তা পলাশ সাহার (৩৭) মা আরতী সাহা। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে আহাজারি করছিলেন সন্তানহারা এই মা।

 

আরো পড়ুন: লালমনিরহাটের শিবরাম স্কুলের বৃত্তি পরীক্ষায় চমকপ্রদ সাফল্য!

 

 

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে র‍্যাব–৭ ক্যাম্পে নিজের কক্ষ থেকে পলাশ সাহার মাথায় গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় পাশে একটি চিরকুটও পাওয়া যায়। র‍্যাবের ধারণা, নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। পলাশ সাহা ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন। র‍্যাবে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশি গ্রামে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে র‍্যাব–৬–এর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে লাশবাহী গাড়িতে পলাশের লাশ কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশি গ্রামে পৌঁছায়। কোটালীপাড়ার তাড়াশি বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০০ মিটার দক্ষিণে তাঁদের বাড়ি। তাঁকে দেখতে সহপাঠী, প্রতিবেশী ও স্বজনেরা বাড়িতে ভিড় করেন। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের পর শেষকৃত্যের জন্য মরদেহ পৌরসভার পাড়কোনা মহাশ্মশানে নেওয়া হয়। সেখানে গার্ড অব অনার ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সাহা বাড়ির পাকা মেঝের টিনশেড ঘরের সামনে বসে আহাজারি করছিলেন পলাশের বড় বোন রমা সাহা, মেজ ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী। নন্দলাল সাহা বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে পলাশ সবার ছোট ও আদরের ছিল। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি, এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। সাব–রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে চাকরি দিয়ে জীবন শুরু। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ পায়। পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর তাঁকে র‍্যাবে পাঠানো হয়।

দুই বছর আগে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ার সুস্মিতা সাহার সঙ্গে বিয়ে হয় পলাশের। বিয়ের দুই মাস পর থেকে সংসারে নানা অশান্তি শুরু হয় বলে জানান নন্দলাল সাহা।

এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে র‍্যাব–৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ সাহা। তখন সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান। তাঁর রক্তাক্ত মরদেহের পাশে একটি চিরকুট পড়ে ছিল। এতে তাঁর মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তাঁরা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো–অর্ডিনেট করে।’

পলাশের বাল্যবন্ধু আরিফ হোসেন বলেন, ‘পলাশ আমার বাল্যবন্ধু। লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে মেলামেশা করত। তার অকালমৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।
Design & Development BY : ThemeNeed.com