নোটিশ :
► সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ।  ► আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৭৪০৬৯২৯২৩
সংবাদ শিরোনাম:
‘আমরা ১৭ বছর খাইনি, এখন খাব’– ঠিকাদারকে বিএনপি নেতা

‘আমরা ১৭ বছর খাইনি, এখন খাব’– ঠিকাদারকে বিএনপি নেতা

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে (সওজ) দরপত্র জমা দিয়ে গাছ কেনায় শাহজাহান আলী নামে নওগাঁর এক ঠিকাদারকে শাসানোর অভিযোগ উঠছে রাজশাহী মহানগরের রাজপাড়া থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান রুবেলের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২০ মে) শাহজাহান আলীর সঙ্গে রুবেলের কথোপকথনের ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে রুবেলকে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করতেও শোনা যায়।

জানা গেছে- ঠিকাদার শাহজাহান আলীও বিএনপির রাজনীতি করেন। তিনি মান্দা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি সওজ রাজশাহীর বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে ৯টি লটে গাছ বিক্রির জন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেন শাহজাহান আলীও। দরপত্র জমা দেওয়ার দিন রুবেলসহ কিছু ঠিকাদারের লোকজন সওজ অফিসেই অবস্থান নেন, যাতে তাদের বাইরে কেউ দরপত্র জমা দিতে না পারেন। তবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে রাখা বাক্সে দরপত্র জমা দেন শাহজাহান আলী। এতে তিনি প্রায় ৬ লাখ টাকায় দুটি লটের গাছ পান। টাকা জমা দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে তাকে বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ঠিকাদার শাহজাহান আলীকে ফোন করেন রুবেল। ৯ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের কথোপকথনে তিনি ঠিকাদার শাহজাহানকে বলেন, ‘রোডসে আর টেন্ডার সাবমিট করবেন না।’ ঠিকাদার শাহজাহান আলী ফোন ধরতেই এ কথা বলেন মাহবুবুর রহমান রুবেল। শাহজাহান প্রশ্ন করেন, ‘কেন?’ রুবেল এবার বললেন, ‘কারণ, আমরা নিজেরাই খাইতে পাচ্ছি না। আমার কথা হলো, আপনি ভাই টেন্ডার-মেন্ডার দিয়েন না, আমার অনুরোধ থাকল। আমরা ১৭ বছর খাইনি, এখন খাব।’ এমন একটি কলরেকর্ড পাওয়া গেছে।

রুবেল বলেন, ‘আপনি এই কাজগুলা কইরেন না, জাস্ট সমস্যা হবে।’ শাহজাহান বলেন, ‘আপনারা যদি নিষেধ করেন, তাহলে বিষয়টা কেমন হয় না?’ রুবেল বলেন, ‘এখন এমন অবস্থা হয়েছে, মান্দার লোক শুনলেই চার-পাঁচটা থাপ্পড় মারবে।’ শাহজাহান বলেন, ‘মান্দার লোক তো আরও টেন্ডার করছে।’ জবাবে রুবেল বলেন, ‘একটার পর একটা অপমান হবেই, দেখবেন। আপনাকে আমি বললাম ভাই ব্যক্তিগতভাবে। মাথায় রাইখেন।’ শাহজাহান জানতে চান, ‘কী করলে অপমান হবে না সেইটা বলেন।’ রুবেলের সাফ জবাব, ‘টেন্ডার না দিলেই অপমান হবেন না।’ ‘টেন্ডার তো হয়েই গেছে’, শাহজাহান এ কথা জানালে এরপর অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন বিএনপি নেতা রুবেল।

তিনি বলেন, ‘আপনাকে এতবার ফোন দিলাম। আপনি ফোনই ধরেন না। তাহলে কী করব বলেন?’ শাহজাহান এ সময় ভদ্রভাবে কথা বলার অনুরোধ করেন। রুবেল বলেন, ‘আপনাকে ফোন করলাম যে এটা উইথড্র করা লাগবে, আপনি ফোনই ধরেননি।’ শাহজাহান বলেন, ‘উইথড্র কেউ না করলে আমি কেন করব ভাই?’ রুবেল বলেন, ‘এটা আমরা মীমাংসা করতাম। শোনেন ভাই, এখন ডিজিটাল যুগ। কাউকে গোপনে টাকা দিয়ে কোনো ব্যবসা হবে না। ওপেন আপনাকে আসতে হবে।’

শাহজাহান বলেন, ‘আপনি টেন্ডার করবেন, করে কাজ নিবেন আপনি।’ শাহজাহান বলেন, ‘নিজের এলাকাতে এখন কুইত্তাও ভাগ দেয় না, জানেন? কুইত্তাও বুলছে যে, তোর এলাকা তুই খা, আমার এলাকা আমি খাই।’ এ সময় শাহজাহান রুবেলের দলীয় পরিচয় জানতে চান। তখন রুবেল বলেন, ‘বিএনপির আমি সভাপতি, রাজপাড়া থানার।’ যদিও রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। রুবেল সভাপতি পরিচয় দেওয়ার পর শাহজাহান জানান, তিনিও ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করেছেন। এখন বিএনপি করেন।

শাহজাহান বলেন, ‘আপনি বলবেন একবার, হারুন বলবে আরেকবার। আমরা কয়জনাকে টাকা দিব রে ভাই? আমি বিধি মোতাবেক কাজ পেয়েছি। আপনাদের দাবি থাকলে মানতে চেয়েছি। এখন আপনি বলছেন দেন, হারুন বলতেছে দেন। তাহলে কয়জনাকে দিব? আমার কয় টাকা লাভ হবে একটা লটে?’ রুবেল বলেন, ‘আমি টাকা চাইনি, আপনাকে আসতে বলেছিলাম।’ শাহজাহান জানতে চান, ‘তাহলে কেন ডেকেছিলেন?’ রুবেল বলেন, ‘যারা যারা পার্টির আসছে, সবার সাথে বসে একটা সিস্টেম করতাম।’

একপর্যায়ে রুবেলের কাছ থেকে ফোন নেন হারুন, তিনি নিজেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবীর লালুর ভাই বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘এরপরে টেন্ডার হলে আপনি আমাদের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ করবেন। আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখে কাজ করবেন। আপনার ভাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করেই টেন্ডার ড্রপ করে।’

শাহজাহান বলেন, ‘আপনার সাথে যোগাযোগ রেখেই তো করি ভাই। আমরা তো বুঝি। যে এলাকার কাজ সে এলাকার কিছু দাবি থাকে। ব্যবসা করি গোটা বাংলাদেশ, এটা আমরা বুঝি। সুতরাং, যেটাই হোক করা হবে। কারণ, আমাদের দিকেও দেখতে হবে। একটা লট পেয়েছি ১৬ বছর পর। আমি ভাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলেরও শিক্ষা সম্পাদক ছিলাম। আমি আপনাদের সাথে যোগাযোগ করবই ভাই, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।’

এ সময় হারুন বলেন, ‘ঈদের আর বেশি দিন নাই। আপনি আসেন, এসে আমাদের সাথে দেখা করে যান।’ শাহজাহান তখন বলেন, ‘লটটা (গাছ) আগে কাটি, তারপরে তো দুই পয়সা হবে, তাই না? কেবল তো টাকা জমার অর্ডার হলো। আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ না করে ব্যবসা করতে পারব? ব্যবসা করলে তো লক্ষ্মীপুরে আপনাদের কাছে যেতে হবে। আমি আসব।’

হারুন বলতে থাকেন, ‘এইডা বইলেন না। সমাধান আপনাকে ঈদের আগেই করতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।’ শাহজাহান বলেন, ‘ঈদের আগে তো লটই কাটতে পারব না। আমাদেরও তো ঈদ-টিদ আছে, বুঝেননি?’ হারুন বলেন, ‘আপনাকে দু-এক দিনের মধ্যেই করতে হবে। সবাই (দরপত্রে গাছ কেনা অন্য ঠিকাদারেরাও) তা-ই করবে।’

কথোপকথনের কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা রুবেল বলেন, সব মিথ্যা। আমি কেন অবৈধ টাকার দিকে তাকাব। ওই ঠিকাদার মিথ্যা বলছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার শাহজাহান আলীকে ফোন করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পরে তাকে আবার কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, এই রকম কোনো ঘটনা শুনিনি। এই প্রথম শুনলাম।

বিষয়টি নিয়ে সওজ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সওজ রাজশাহীর বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে বৃক্ষপালনবিদের কার্যালয়ের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।
Design & Development BY : ThemeNeed.com