নোটিশ :
► সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ।  ► আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৭৪০৬৯২৯২৩
দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও, মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে সুন্দরগঞ্জে!

দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও, মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে সুন্দরগঞ্জে!

রাশেদুল ইসলাম রাশেদ,নিজস্ব প্রতিবেদক: দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও মানুষ কেনা-বেচার হাট বসে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। ভোর বেলা থেকে মানুষ আসা শুরু করে এ হাটে, অপেক্ষায় থাকে নিজেকে বিক্রির জন্য। ক্রেতা এসে পছন্দ ও দরদাম করে নিয়ে যায় তাদের।

বুধবার (২৮ মে) তখনো ভোরের আলো ফোটেনি। বৃষ্টি পড়ছে গুঁড়ি গুঁড়ি। সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিস্তা বাজার মোড়ে শুরু হয়েছে মানুষের আনাগোনা। কেউ আসছেন বাইসাইকেলযোগে, কেউবা হেঁটে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এসব মানুষের কারও কাছে আছে কোঁদাল, কেউবা এনেছেন পাসুন বা নিড়ানি, কারও কাছে ডালি কিংবা কারও হাতে কাস্তে। এই মোড়কে ঘিরে আলাদা আলাদা দলবেঁধে বসে থাকা মানুষগুলো অপেক্ষা করছে ক্রেতা বা খরিদ্দারের।

আরো পড়ুন: গাইবান্ধায় বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে ধানখেত, শঙ্কায় চাষি

খরিদদার এসে পছন্দ মতো লোক, সংখ্যা ও দাম বললে নির্দিষ্ট একটা কাজ বা পুরো দিনের জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেবে এই মানুষগুলো। আর এভাবে বিক্রি করতে পারলে তবেই হবে তাদের পরিবারের খাওয়া-পাড়ার ব্যবস্থা হয়।

প্রায় এক যুগ ধরে প্রতিদিন ভোরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা বাজার মোড়ে বসে নামহীন শ্রমজীবীদের এ হাট। চলে সকাল ৯টা পর্যন্ত। কৃষি ও ভবন নির্মাণ শ্রমিকেরা আসেন এখানে। দিন চুক্তিতে তাদের কিনতে আসেন হরিপুর, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, দহবন্দসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থরা। দরদাম ঠিক হওয়ামাত্র শ্রমিকেরা রওনা হন মালিকের কাজে। দিন শেষে মজুরি বুঝে পেলে এখান দিয়েই ফেরেন বাড়ি। সাথে কিছু টাকা এবং সদাই। এরপর রাত শেষে আরও একটি ভোরের অপেক্ষা।

সরেজমিনে গিয়ে হাটের ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, এক শ্রমিক সামনে এসে সালাম দিয়ে বললেন, মামা কামলা লাগবে? কত দিবেন?’ পরে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হয় তার সাথে। নাম মোস্তাফিজুর রহমান। উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের সোনারায় গ্রাম থেকে সেখানে এসেছেন তিনি। বৃষ্টিমুখর ভোরে মোস্তাফিজুর জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় খরচের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে বড় মেয়ে। কী কী বাজার করতে হবে, তাও বলে দিয়েছে।

ভোরের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে প্রায় আধভেজা মোস্তাফিজুর বলেন, বড়রা লবণ–মরিচ দিয়েই ভাত খেয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু বাচ্চারা তো সেটা পারে না। তাদের জন্য কোনো না কোনো তরকারি লাগেই। ফলে এখন তিস্তা বাজার থেকে বৃষ্টির কারণে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। অথচ এই বৃষ্টিতে কাজ না পেলে খালি ব্যাগ নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হবে তাকে। সে জন্য এই তিস্তা বাজার মোড়ে তার বিক্রি হওয়াটা জরুরি।

মোস্তাফিজুর রহমানের মতো নিজেদেরকে সারাদিনের জন্য বিক্রি করতে এখানে এসেছেন ফিরোজ কবির, ফাহিম, মৃদুল, সাজু, শুভ, উজ্জ্বল, রাসেল, মুন, হাবিবুর রহমান । তারাও এসেছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রমিক । কথা হয় ফাহিম নামের এক শ্রমিকের সাথে। ৫ সদস্যের সংসার তার। বড় ছেলে শিবরাম আলহাজ্ব মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই তিস্তা বাজার মোড়ে নিজেকে বিক্রি করতে না পারলে হাতে টাকা আসবে না। আর টাকা না এলে খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ হয়ে যাবে পুরো পরিবারের। তাছাড়া, আছে ছেলের পড়াশোনার খরচ। সে কারণে এখানে নিজেকে বিক্রি করতে পারাটাই জিতে যাওয়া।

শ্রী অতুল চন্দ্র রায় এখানে এসেছেন শ্রমিক কিনতে। তার বাড়ি মল্লিকপাড়ায় । ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন বলে গ্রাম ঘুরে কাজ করার লোক খোঁজার সময় হয় না তার। অনেক সময় খুঁজলেও পাওয়া যায় না। তিস্তা বাজার মোড়ে এলে যেকোনো ধরনের কাজের লোক পাওয়া যায়। এ হাট থেকে দরদাম করে কাজের লোক বেছে নেয়া যায়। সে কারণে কাজের লোকের দরকার হলেই এখানে চলে আসেন অতুল চন্দ্র।

এই শ্রমজীবীদের একটি সংগঠন আছে। ষাটোর্ধ্ব মো. আকবর আলী সে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এখন। তিনি জানান, বৃষ্টি হলে শ্রমিক কমে যায়। নইলে দেড়শ পর্যন্ত মানুষ উপস্থিত হয় প্রতিদিন। কাজের ধরন অনুসারে প্রতিদিনের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সাথে দুপুরের খাবার।

মো. আকবর আলী জানান, বৃষ্টি বাদলের দিনে এই অসহায় মানুষগুলোর বসার কোনো জায়গা নেই। বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। তিস্তাবাজার মোড়ে তিনি এই শ্রমীকদের বসার জন্য ছোট্ট জায়গার আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

প্রবা/ আরইসআর


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।
Design & Development BY : ThemeNeed.com