মোঃ মামুনুর রশিদ, লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটে ভুল্লি বেওয়া (৭০) নামে এক বিধবার ঘর পোড়ানোর মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মহাসিন মন্ডল (৬২)।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মহসিন লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেছেন। গত ৬ জুলাই দায়ের করা ঐ সাধারণ ডায়েরিতে মহসিন মন্ডল উল্লেখ করেছেন, ৪ জুলাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিকট সাক্ষ্যদান শেষে প্রতিবেশী আবুল হোসেনের বাড়ী থেকে নিজ বাড়ীতে যাবার সময়। উল্লেখিত মামলার আসামি দুলাল মিয়ার ছেলে শিমুল (২৪) এবং মুক্তার আলীর ছেলে সেলিম মিয়া ও শাহজাহান মিয়া মহসিনকে, মৃত কমের উদ্দিনের ছেলে আকবর আলীর শলাপরামর্শে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সামনেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
পরে স্থানীয়রা তাকে নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেয়। উল্লেখ্য এর আগে, ০৫ জুন দুপুরে জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী (জিডি) করেন ভুল্লী বেওয়ার ছেলে ভোলা মিয়া। বিধবা ভুল্লী বেওয়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটী ইউনিয়নের ঢাকনাই কুড়ারপাড় গ্রামের মৃত ছানে মামুদের স্ত্রী।
থানায় দায়ের করা মামলা ও জিডি সুত্রে জানা গেছে, স্বামীর রেখে যাওয়া আড়াই শতাংশ জমির উপর সরকারী ভাবে দেয়া আধাপাকা ঘরে বসবাস করেন বিধবা ভুল্লী বেওয়া। দুই ছেলে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে রাজধানী ঢাকায় রিক্সা চালান। সেখান থেকে ছেলেদের পাঠানো সামান্য টাকা আর সরকারী ভাবে পাওয়া বিধবা ভাতায় চলে ভুল্লি বেওয়ার সংসার। বাড়ির পাশে সরকারী কুড়ায় (বিল) হাঁস পালন করেন ওই বৃদ্ধা। দুই বছর আগে সেই কুড়া জবর দখল করতে কুড়ায় বিষ দিয়ে হাঁস মেরে ফেলেন প্রতিবেশী আকবর আলীর ছেলে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে কর্মরত কনস্টেবল আমিনুর রহমান গংরা। এ ঘটনায় ক্ষতিপুরন চেয়ে পুলিশ সদস্যসহ তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যা রহস্যজনক ভাবে নথিভুক্ত না হলেও কপাল পুড়ে যায় বিধবা ভুল্লী বেওয়ার। এ অভিযোগ দায়ের করায় ভুল্লী বেওয়ার পক্ষে স্বাক্ষী দেয়া স্বাক্ষী জুয়েল সরকারের ঘর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতেই শেষ নয়, ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্য আমিনুর রহমান গত ১ জানুয়ারী ছুটি ছাড়ায় বাড়িতে এসে বিধবা ভুল্লী বেওয়ার সরকারী ঘরটি ভেঙ্গে আরেকটি ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ ভুল্লি বেওয়ার। এ ঘটনায় ওই বিধবা ঘটনাস্থলের ভিডিও সরবরাহ সহ সদর থানায় একটি মামলা (জিআর-১২৬/২১) দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ সদস্য আমিনুরকে প্রধান আসামী করা হয়। কিন্তু লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের খাতায় এ আসামী আমিনুর রহমান পলাতক থাকলেও কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে তিনি কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন। আদালতে জামিন না নিয়ে বীরদর্পে পুলিশে চাকুরী করছেন ভুল্লি বেওয়ার দেয়া মামলার প্রধান আসামী।
বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর কর্মকর্তা বলেন, বাড়ির আগুন লাগার বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি, তদন্তে যাহা পাবো তার প্রতিবেদন দাখিল করবো।
ভুল্লি বেওয়ার দায়ের করা মামলার বিষয়ে লালমনিরহাট জজকোর্টের পি-পি এডভোকেট আকমল হোসেন বলেন, আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে স্বাক্ষীদেরকে কোন ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা যাবে না। যদি ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে তাহলে আরও একটি অপরাধ সংগঠিত হবে। আইনের গতিতে মামলা চলছে আদালত নির্ধারণ করবে কে অপরাধী।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ময়নুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, ভুল্লি বেওয়া আসলে নিরীহ, আমিও চাই তিনি যেনো আইনের ন্যায় বিচার পায়।
এ-বিষয়টি নিয়ে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ভুল্লি বেওয়ার বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্হা নেয়া হবে।