অনলাইন ডেস্ক:: সুনামগঞ্জে দুদকের গণশুনানি। সোমবার দুপুরে শহরের হাছন রাজা মিলনায়তনেছবি: প্রথম আলো
গণশুনানিতে অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য দিতে দুদক কর্মকর্তারা যোগাযোগ করেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) সঙ্গে। কিন্তু পিআইও সাফ জানিয়ে দেন, গণশুনানিতে আসতে পারবেন না। দুদক কর্মকর্তার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আসতে পারব না। আপনারা যা পারেন করেন…।’
গণশুনানিতে আসতে না চেয়ে এমন মন্তব্য করা ওই কর্মকর্তা হলেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার পিআইও নুরুন নবী।
আজ সোমবার সুনামগঞ্জে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহীতাদের নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উদ্যোগে এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে সোমবার এই গণশুনানি হয়। আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় গণশুনানি। দুদকের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সানের উপস্থিতিতে সেবাপ্রার্থীদের নানা অভিযোগ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বক্তব্য ও মতামত দেন।
মঞ্চে একে একে অভিযোগ জমা দেওয়া সেবাপ্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ডেকে নেন সঞ্চালক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। একপর্যায়ে তিনি ঘোষণা দেন শাল্লা উপজেলার একটি প্রকল্প বিষয়ে আমির হোসেন নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দার একটি অভিযোগ আছে। এ জন্য তিনি শাল্লার পিআইও নুরুন নবীকে মঞ্চে ডাকেন। তখন দুদকের একজন কর্মকর্তা মাইক নিয়ে জানান, অভিযোগটি পাওয়ার পর তাঁরা গতকাল রোববার মুঠোফোনে পিআইও নুরুন নবীকে এই গণশুনানিতে আসার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পিআইও সাফ বলে দেন, ‘আমি আসতে পারব না, আপনারা যা পারেন করেন।’
বিষয়টি নিয়ে তখন গণশুনানির মিলনায়তনজুড়ে কানাঘুষা শুরু হয়। তখন মঞ্চে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা তাঁর (পিআইও) বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের অনুসন্ধান করব। আমরা দেখতে চাই তাঁর হাত কত লম্বা।’
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘আমরা ওই কর্মকর্তাকে (পিআইও) স্থায়ীভাবে বরখাস্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করব।’
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য জানতে নুরুন নবীর মুঠোফানে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ধরেননি। পরে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহাম্মেদ, দুদকের সিলেট সমন্বিত কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রাফি নাজমুস সাদাত, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজ আহ্সান বলেন, দুর্নীতি শোষণের হাতিয়ার। এর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দুর্নীতি এখন আর শুধু জনপ্রতিনিধি, নেতা, সরকারি কর্মকর্তার মধ্যে নেই, এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতি দেশটার কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে, সেটি ২০২৪-এ বোঝা গেছে। সব শেষ করে দিয়েছে। সব শোষণ করে নিয়ে গেছে। কাউকে ঘুষ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ঘুষ খায়, তারা অমানুষ। তারা নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজনকে অসম্মান করছে। ঘুষ দেবেন না, চিৎকার করুন, প্রতিবাদ করুন। সবাই কথা বললে এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে। একসময় দুদকের আর দরকার হবে না।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার সঞ্চালনায় গণশুনানিতে সেবাপ্রার্থীরা জেলা সদর হাসপাতাল, পৌরসভা, বিদ্যুৎ, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, পুলিশ বিভাগ, নির্বাচন কার্যালয়, বিআরটিএ, সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পাসপোর্ট, জেলা কারাগার, এলজিইডি, ভূমি, প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, বিটিসিএল, সেটেলমেন্ট কার্যালয়সহ বিভিন্ন বিভাগের অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার লোকজন অভিযোগ তুলে ধরেন এবং এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জবাব দেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য দেন। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ছিল ভূমিবিষয়ক।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো
Leave a Reply