নোটিশ :
► সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংবাদদাতা নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ।  ► আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য যোগাযোগ করুন : ০১৭৪০৬৯২৯২৩
সংবাদ শিরোনাম:
এ সপ্তাহেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ রাস্তার কাজ না করেই ৫২ লাখ ৫৯ হাজার ১০৭ টাকা আত্মসাৎ গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা পঞ্চগড়ে মুলা বিক্রেতা থেকে কটিপতি,দুলালের দাপটে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে তছনছ উত্তরের জেলা লালমনিরহাট ‎শহীদুল মাস্টারের সম্মান ও মর্যাদাহানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন লালমনিরহাটে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু, ছয় ঘণ্টা পর লাশ উদ্ধার ভারতের গুজরাটে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি গ্রেফতার ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৫৩৫ পর্দার অভিনয়ে মা-ছেলে, বাস্তবে তারা স্বামী-স্ত্রী
গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা আ.লীগের তিন নেতা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জামশা এলাকায় গ্রাহকের জামানতের শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা গ্রাম-মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি নামক এনজিও প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আওয়ামী লীগের তিন নেতা। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বছরের পর বছর ঘুরেও পাচ্ছে না জামানতের আসল টাকা ও লভ্যাংশ। প্রতারণার এই ফাঁদে পড়ে ভিটেমাটি হারা হয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক।

জামানতের টাকা চাইতে গিয়ে হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে বছরের পর বছর। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। এরই ফলশ্রুতিতে রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা এলাকায় অবস্থান ধর্মঘট ও মানববন্ধন করে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। এ সময় বিক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সমবায় মালিক আমজাদ হোসেনের বসতবাড়িতে ভাঙচুর করে।

গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে এমন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় জামশা ইউনিয়নের দক্ষিণ জামশা এলাকার এই সমবায় প্রতিষ্ঠানটি। আশপাশের জামশা, জামির্তা, চারিগ্রাম, বলধারা, তালেবপুর এবং জয়মন্টপ ইউনিয়নের হাজারো গ্রাহক এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন।

ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, যৌথ মালিকানায় ২০০১ সালে সমবায় প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধিত হয়। জামশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুজ্জামান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোসেন, ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মানিক মিয়া উজ্জ্বল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুল্লাহ যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন‌ এই সমবায় সমিতিটি। এর মধ্যে হাবিবুল্লাহ বেশ কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ার পরে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন ওই তিন আওয়ামী লীগ নেতা।

শরীরের দুটি কিডনিতেই জটিলতা ধরা পড়েছে গ্রাহক ফাতেমা আক্তারের (৩৩)। আলাপকালে ফাতেমা বলেন, জটিল এই সমস্যায় চিকিৎসার খরচ মেটাতে খামারি স্বামী বিক্রি করেছেন গরু-বাছুরসহ ফসলি জমি। পাশাপাশি বাবার বাড়ি থেকে এনেছেন জমি বিক্রির টাকা। সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য জামানত হিসেবে রেখেছিলেন গ্রাম-মানবিক উন্নয়ন ক্ষুদ্র সমবায় সমিতিতে। চাহিদা বিবেচনায় চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে যে কোনো সময় তুলতে পারবেন টাকা- এ ভরসায় দুই মাস মেয়াদে তিন বছর আগে রেখেছিলেন ১০ লাখ টাকা। জামানতের টাকার তিন বছর পার হলেও পাওয়া যায়নি কোনো অর্থ। টাকার অভাবে আটকে আছে চিকিৎসা।

তিনি আরও বলেন, টাকা দেওয়ার পর থেকে তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি, কোনো টাকা দেয়নি। আমার যা সহায় সম্বল ছিল সব শেষ। পোলাপান নিয়ে কীভাবে আমার দিন যায় রাত পোহায় আমি জানি আর আল্লাহ জানে। আমার পরিবারটারে একেবারে নিঃস্ব করে ফালাইছে (ফেলছে)।

ভুক্তভোগী প্রবাসী সেলিম মিয়া (৩০) বলেন, গ্রাহকের শত কোটি টাকা পাচার করে দুবাইতে ব্যবসা শুরু করেছে এই চক্র। পরিবারসহ যে কোনো সময় চলে যাবে। তারা গ্রাহকের টাকায় ব্যবসা করেছে কোথাও কোনো লস খায়নি। পাবলিকের টাকায় পাবলিককে দিয়েছে। সমিতির ভাষ্যমতে তাদের ফিল্ডে পাঁচ কোটি টাকা আছে কিন্তু তারা হাজার খানেক গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত নিয়ে রেখেছে শত কোটি টাকা। তারা এই টাকা অবৈধভাবে দেশ থেকে পাচার করেছে। তাদের এই চক্রান্ত পূর্ব পরিকল্পিত।

চারিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সাবিনা বেগম (৪৫) বলেন, আমার স্বামী এবং ছেলে দুজনেই প্রবাসী। বিগত ২০০৬ সালে ১০ লাখ টাকা এই সমিতিতে রাখেছি। বছর দশেক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে দেড় শতাংশ হারে লভ্যাংশ পেয়েছি। প্রয়োজনে ২০১৭ সালে মূল টাকা তুলে নিই। এরপর পুনরায় ২০১৮ সালে ১০ লাখ টাকা রাখি সমিতিতে। দ্বিতীয়বার গচ্ছিত টাকা রাখার পর থেকে লভ্যাংশ দিতে তালবাহানা শুরু করে সমিতি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বহুভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলেও টাকা ফেরত দেয়নি। এই টাকার জন্য সংসারে অশান্তি তৈরি হয়েছে।

এ সব বিষয়ে অভিযুক্ত কাউকেই এলাকাতে পাওয়া যায়নি। তবে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সমবায়ের পরিচালক গাজী কামরুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, টাকা-পয়সার জন্য বাড়িতে প্রতিনিয়তই লোকজন আসে। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আট থেকে নয় কোটি টাকার কথা স্বীকার করেছেন, যা গ্রাহক পায়। পর্যায়ক্রমে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা পলানোর পর থেকে রাজনৈতিক মামলায় তিনিও গা ঢাকা দিয়ে আছেন। সমিতির টাকাগুলো একাধিক জায়গায় ইনভেস্ট করা আছে। সেখান থেকে প্রফিট আসা শুরু হলে তিন থেকে চার বছরের ভেতর গ্রাহকের সব টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌসী বলেন, প্রথমত কোনো সমবায় সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত সংগ্রহ করতে পারবে না। সমিতির নিবন্ধন থাকলে সদস্যদের মাঝে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারবে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করলে আমরা সমিতির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ওয়েবসাইট এর কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পুর্ণ বেআইনি।
Design & Development BY : ThemeNeed.com