গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বানোয়াট অভিযোগে প্রবীণ শিক্ষক শহীদুল মাস্টারের অর্জিত সম্মান ও মর্যাদাহানি করে মানববন্ধন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ ও উপযুক্ত প্রতিকারের দাবিতে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী শহীদুল মাস্টার।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে এই সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী শীদুল মাস্টার। এরআগে গত ১৮ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে এক মানববন্ধন করা হয়।
শহীদুল্লাহ মাস্টার কুড়িগ্রাম জেলার, রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জের
চর নেওয়াজি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজী বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন সহকারী শিক্ষক এবং মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ৫ বারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। বর্তমানেও তিনি ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত বক্তব্যে দু:খের বলেন, গত ১৮ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটিবুড়াইল মৌজায় আমাকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্যে মানববন্ধন করা হয়। যা আমাদের পরিবারের জন্য চরম আপত্তিকর ও মানহানির সামিল। তাই আমি ওই মানববন্ধনের তীব্র প্রতিবাদ ও এর সঠিক প্রতিকারের দাবি করছি।
তিনি উল্লেখ করেন, সেদিনের মানববন্ধনে তার বিরুদ্ধে যে ১৯৪ একর জমি অবৈধভাবে দখল করার নিমিত্তে ভুয়া রেকর্ড তৈরি করার তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পুর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।
এছাড়া আমি ও আমার সহযোগীদের নাম করে যে ১৯৪ একর জমির ভুয়া রেকর্ড তৈরি করার তথ্য উপস্থাপন করা হয় তা সম্পূর্ণই মিথ্যা। মূলত ১৭১ একর জমি ৭১ জন ব্যক্তি রেকর্ডমূলে দখল ভোগ করে। তার মধ্যে সেই নুরুল আমিন মন্ডলও রেকর্ড ছাড়াই জোর পূর্বক দখল ভোগ করে আসছেন। আর ১৭১ একর জমির মধ্যে আমার নামে মাত্র ২০ একর জমি সরকারি নিয়মানুযায়ী রেকর্ড ভুক্ত আছে।
এছাড়া ওই মানববন্ধনে তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাকে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে উপস্থাপন করে স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করার মত ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, আমি গত ১৭ বছর আগে আওয়ামীলীগের সভাপতির পদ থেকে লিখিতভাবে অব্যাহতি নিয়েছি। এই ১৭ বছরে রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে আমি আওয়ামীলীগের কোনো পদেই ছিলাম না এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে কোনো কার্যক্রমের সাথে আমি জড়িত নেই।
মূলত আওয়ামীলীগের সেই পুরনো সভাপতির পদের তকমা দিয়ে হাজী নুরুল আমিন মন্ডল, সাদা মিয়া, আব্দুর রশিদ, রাজু মিয়া ও নজরুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা আমাকে হেয় করা, আত্মসম্মানের ক্ষতি করা এবং তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে হাসিল করার নিমিত্তে সেদিন আমাকে নিয়ে এই ন্যাক্কারজনক সাজানো মানববন্ধনের আয়োজন করে।
শহীদুল মাস্টার আরো উল্লেখ করেন, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ভূমি শাখার তদন্তে আমার নামে রেকর্ডভুক্ত জমির ওপর সরকারের কোনো শর্ত বা মালিকানা নেই মর্মে প্রতিবেদন দেন। একই সাথে সিভিল আদালতের মামলার রায়ে ওই সকল জমি আমার নামে রেকর্ডভুক্ত হওয়ার আদেশ হয়। পরবর্তীতে সরকার পক্ষ কোন এক সুত্রে ওই সকল জমির মালিকানার আপত্তি হলে আমাকে বিবাদী করে ভূমি আইনে মামলা করে, যা আদালতে চলমান। ওই মামলা আমি ভূমি আইন মোতাবেক চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছি। আমি শতভাগ আশাবাদী রায় আমার পক্ষেই আসবে।
চলমান মামলায় আমার নামে রেকর্ডভুক্ত জমির বাদি সরকার ও বিবাদি আমি নিজেই। কিন্তু হাজী নুরুল আমিন মন্ডল সহ অন্যান্যদের এখানে স্বার্থ কি? প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি বলেন, মূলত হাজী নুরুল আমিন মন্ডল তার অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে সেদিন গুটি কয়েক লোক নিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করে। এই নুরুল আমিন মন্ডলই আমার নামে রেকর্ড হওয়া ও অন্যান্যদের রেকর্ডভুক্ত জমিগুলো ইতিপূর্বে অবৈধভাবে জোর পূর্বক ভোগ দখল করে আসছিলেন। আমার নামে চুড়ান্তভাবে রেকর্ড হওয়ার পর এসব জমি তার হাত ছাড়া হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি সেদিন ওই সাজানো মানববন্ধনের আয়োজন করেন। উপরন্ত তারাই সরকারি খাস জমি জবর দখল করে ভোগ করে আসছে। আমরা বাধা বিপত্তি করায় আমার বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। তাদের মধ্যে সাদা মিয়া আওয়ামীলীগের একজন ঘোর সমর্থক।
তিনি ভারাক্রান্ত মনে উল্লেখ করেন, আমি একজন সাবেক শিক্ষক। গাইবান্ধা-কুড়িগ্রামসহ সারাদেশেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে আমার অসংখ্য ছাত্রছাত্রী বড় বড় পদে কর্মরত আছে। সেদিনের মানববন্ধন থেকে আমার নামে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও স্বার্থ চরিতার্থ করতে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে আমি মর্মাহত। একই সাথে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিনের যে সুনাম অর্জিত হয়েছিল তা ম্লান করে দিয়েছে নুরুল আমিনের নেতৃত্বে হওয়া মানববন্ধনে। আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে সকল ঘটনাদি তদন্তসহ ওই মিথ্যা মানববন্ধনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
Leave a Reply