একাধিক বার প্রকল্প দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হলেও বাস্তবতায় কোন কাজই হয়নি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদের আবাসন মেরামত। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সরকারী কোয়াটারে থাকা পরিবারগুলো। কোয়াটারে বসবাসকারী ও রাজস্ব তহবিলের ব্যায় রেজুলেশনে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদে কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য কয়েকটি কোয়াটার রয়েছে এ উপজেলায়। যার মধ্যে একটি কোয়াটার সম্পুর্নরুপে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় তা পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। বাকী কোয়াটারগুলোর অনেক ভবনের ছাদ বেয়ে বৃষ্টির পানি আর পলেস্তারা খুলে খুলে পড়ছে। জানালা প্রায়গুলোর ভেঙে পড়ে আছে। দরজা ও গেটগুলো ভেঙে পড়ে আছে। আবাসনে বসবাসকারীরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। এসব কোয়াটার প্রায় সময় মেরামত দেখানো হয়েছে উপজেলা রাজস্ব তহবিল থেকে। কিন্তু তা কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে কোন কাজই করা হয়নি বলে অভিযোগ আবাসনে বসবাসকারীদের।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক আশা কোয়াটারে বসবাসকারী এক কর্মকর্তার স্ত্রী বলেন, দীর্ঘ চার বছর ধরে এই কোয়াটারে বসবাস করছি। কোন দিন মেরামত করা হয়নি। জানালা ও ভবনের গেট ভাঙা। ভবনের পলেস্তারা খুলে খুলে গাঁয়ে পড়ছে। অনেকবার বলা হলেও মেরামত বা সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের ব্যায় ভাউচারে দেখা যায়, গতবছর ৫ আগস্টে ২৪হাজার ৯৫০টাকা ও চলতি বছর ১৪ মে ২৪ হাজার ৮২০ টাকা ব্যায়ে দুইটি পৃথক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
অভিরুচী কোয়াটারের গেটেই জমে আছে পানি। স্যাতস্যাতে দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে ভবনে প্রবেশ করতে হয়। সিড়ির জানালা ভাঙা পড়ে আছে। নিচতলার দুইটি ইউনিট বসবাসের অযোগ্য হওয়ায় বইয়ের গোডাউন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় দুই ইউনিটে দুই পরিবার বসবাস করেন। সেই কোয়াটারটিও গতবছর ১৪ নভেম্বর ২৩হাজার ৪২০টাকা এবং চলতি বছর ১৩ জানুয়ারী ২৪হাজার ৯৮০ টাকা ব্যায়ে মেরামত দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, রাজস্ব তহবিলের ব্যায় ভাউচারে ৬মাসের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদের বাতি মেরামতে ব্যায় দেখানো হয়েছে ৫৬ হাজার ৯৬০ টাকা। উপজেলা পরিষদের অফিস রুম রং না করেও ২৪ হাজার ৩শত টাকার ভাউচার দেখানো হয়। অফিসের সোফা ও পানির লাইন মেরামতে ২১ হাজার ৭৪০ টাকার ব্যায় দেখানো হয়েছে। সব মিলে গত বছর আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত ১০ মাসে উপজেলা পরিষদ ভবন ও বাসাবাড়ি মেরামতে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এসব প্রকল্প ইউএনও নিজেই বাস্তবায়ন করেছেন বলেও উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভার রেজুলেশন মুলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা পরিষদের একজন কর্মচারী বলেন, উপজেলায় আগত অতিথি ও ভিআইপিদের আপ্যায়ন খরচ মেটাতে এমন ভাউচার দেখানো হয়। সরকারী ভাবে আপ্যায়ন ব্যায় না থাকায় উপজেলা পরিষদ ভবন ও আবাসন মেরামত দেখিয়ে রাজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হয়।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, কোয়াটারগুলো মেরামত করা হবে। এটার জন্য প্রকল্প হাতে নিতে গিয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে দুরুত্ব তৈরী হয়েছে। অতিথিদের আপ্যায়ন ব্যায় সরকারী ভাবে না থাকায় সেটাও মেরামতে যুক্ত হতে পারে। এ অবস্থা সারাদেশে। ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ছাড়া এ ব্যায় ভাউচার বুঝতে পারবেন না।
আদিতমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, উপজেলা পরিষদ ভবন ও বাসাবাড়ি মেরামত ব্যায় ইউএনও নিজেই বাস্তবায়ন করেন। এমন ভুয়া বিল ভাউচারে স্বাক্ষর না করায় ইউএনও’র সাথে সম্পর্কের দুরুত্ব তৈরী হয়েছে। ইউএনও অফিসারদের নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন। যা তদন্তনাধিনের রয়েছে। সুষ্ঠ তদন্ত হলে ইউএনও’র দুর্নীতি বেড়িয়ে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি।