আল আমিন খন্দকার, স্টাফ রিপোর্টার।। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগ ও কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের বাহন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার হারিয়ে গেলেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের মালামাল ও মানুষের যোগাযোগের বাহন হিসেবে এখনও ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন রয়েছে।
বর্ষার সময় যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা আর কালের পরিক্রমায় শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের মালামাল বহনের একমাত্র বাহন হলো ঘোড়ার গাড়ি।
নদীর পানি নেমে যাওয়ায় পদ্মার চরাঞ্চল এখন মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এ কারণে চরবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ঘোড়ার গাড়িযোগে বহন করে থাকে। বিকল্প হিসেবে আবার অনেকে হেঁটেই নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটান।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিস্তা নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে চর জাগতে শুরু করে। চর জাগলেই শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের বাহন হয়ে দাঁড়ায় ঘোড়ার গাড়ি। শুকনো মৌসুমে চরবাসী তার লালিত স্বপ্নের ফসল চাষ করতে থাকে।চরাঞ্চলে সাধারণত বাদাম, ভুট্টা, গম, মসুর ডাল, কাউন, বোরো ধান, মিষ্টি আলু চাষ হয়ে থাকে। এসব ফসল চাষ শুরু করেছে, যার কারণে এখন চরাঞ্চলে যোগাযোগ খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দু’চোখ যত দূর যায় শুধু শুকনো মাঠ আর বালু। এ কারণে চরাঞ্চলের মানুষের মালামালের বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়িই এখন একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চরাঞ্চলের চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল তোলে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্যও একমাত্র মাধ্যম হলো এ ঘোড়ার গাড়ি। অন্যদিকে তা উপজেলা সদরে বিক্রি করার জন্য নদীর ঘাটে নিয়ে আসার মাধ্যমও হলো এ ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলে কোনো রাস্তাঘাট না থাকায় অধিকাংশ ঘোড়ার গাড়ির চালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়াচ্ছে এক চর থেকে অন্য চরে।
উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরাঞ্চলের শহিদুল মিয়া (১৫) নামে এক ঘোড়ার গাড়ির চালক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কাম না করলে খামো কী। বাপে এক বেলা কাম করলে আরেক বেলা কাম করবের পারে না। সংসার চালানোর জন্য আমিই এখন ঘোড়ার গাড়ি চালাই। সারাদিন যে টাকা আয় করি তা দিয়া সদাই করে বাড়ি ফিরি।’
ঘোড়ার গাড়ি চালক ফজলার রহমান (২৫) বলেন, ‘শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের মানুষের ও প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের একমাত্র মাধ্যম হলো ঘোড়ার গাড়ি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালাই। তবে ঘোড়ার পেছনে যে টাকা খরচ হয় অনেক সময় তা উঠাতেও পারি না। প্রতিদিন ঘোড়ার খাওয়ার পেছনে দুইশ টাকা খরচ আর আয় হয় তিন থেকে চারশ টাকা। কিন্তু কোনো কিছু আর করতে না পারায় এখনও এ ঘোড়ার গাড়ি চালিয়েই সংসার চালাচ্ছি।’
তাছাড়াও তারাপুর,চরখোর্দ্দা,বেরহিমসহ উপজেলার অনেক চরাঞ্চলে এমন দৃশ্য দেখা যায়।