স্টাফ রিপোর্টার।। পুলিশের চ্যালেঞ্জে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন নারীরা। দেশে কনস্টেবল ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে মাত্র ১৪ জনকে নিয়ে ১৯৭৪ সালে পুলিশে নারীর যাত্রা শুরু। সময়ের আবর্তে ২০২১ সালে তা ১৫ হাজার ১৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। নারী পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে। অলংকৃত করেছেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের পদও।
নারীর এই অগ্রযাত্রার পথ সহজ ছিল না কখনোই। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের। নারী পুলিশ সদস্যদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে এক শ্রেণির পুরুষ কর্মকর্তার অসংবেদনশীলতা এই সমস্যা আরও প্রকট করেছে। তবুও তারা থেমে যাননি। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান পরিচালনা থেকে শুরু করে চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করছেন নারী সদস্যরা। দায়িত্ব পালনকালে বিলিয়ে দিয়েছেন জীবন। পুলিশের সর্বত্রই চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন তারা।
নারী পুলিশ সদস্যরা মেধা, যোগ্যতা, সাহসিকতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন। জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ, জলদস্যুদের দমন ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ভূমিকায় থেকে অভিযানে অংশ নিচ্ছেন তারা। পাশাপাশি অগ্রিম গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলায়ও অবদান রাখছেন নারী সদস্যরা। কাজ করছেন নারী নির্যাতন, পাচার ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, একতরফা তালাকের ক্ষেত্রে দেনমোহর ও খোরপোষ আদায় এবং যৌতুকসহ বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন নারী পুলিশ সদস্যরা। অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় জরুরী সেবা ‘৯৯৯’-এর কল সেন্টারের ৮০ ভাগ সদস্যই নারী পুলিশ। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সারা দেশের থানাগুলোতে নারী ও শিশু ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এগুলো পরিচালনা করছে পুলিশের নারী সদস্যরা। এখানে প্রায় চার হাজার নারী পুলিশ সদস্য কাজ করছে। তবে এখানে জনবল আরও বাড়ানো উচিত বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নয়টি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার পরিচালনা করছে পুলিশের নারী সদস্যরা। এই মুহূর্তে পাঁচটি জেলার এসপি এবং দুটি থানার ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে নারী পুলিশ। কুড়িগ্রামে সৈয়দা জান্নাত আরা, লালমনিরহাটে আবিদা সুলতানা, গোপালগঞ্জে আয়েশা সিদ্দিকা, বান্দরবানে জেরিন আক্তার এবং ঝালকাঠিতে ফাতিহা ইয়াসমিন এসপি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সাল থেকে কঙ্গোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন পরিচালনা করছেন বাংলাদেশের নারী পুলিশ। সেখানে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪০০ জন নারী পুলিশ কাজ করেছেন। সূত্র জানায়, পুলিশে বর্তমানে নারী উপ-মহাপরিদর্শক পদে দুজন, অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পদে তিনজন, পুলিশ সুপার পদে ৭১ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে ১০৯ জন এবং সহকারী পুলিশ সুপার পদে ১০০ জন ক্যাডার কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া পুলিশে ১০৯ জন পরিদর্শক (নিরস্ত্র), ৭৯৭ জন জন এসআই (নিরস্ত্র), ৫৮ জন সার্জেন্ট, এক হাজার ১০৯ জন এএসআই, ২১১ জন নায়েক এবং ১২ হাজার ৫৯৪ জন কনস্টেবল হিসাবে নারীরা কাজ করছে। পুলিশের দুই ডিআইজি হচ্ছেন আমেনা বেগম ও আতিকা ইসলাম। আমেনা বেগম বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি ও পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। অপর ডিআইজি আতিকা ইসলাম এখন হাইওয়ে পুলিশে কাজ করছেন।
পুলিশের নারী সদস্যদের কাজ করতে গিয়ে বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলেও জানা গেছে। নারী পুলিশ সদস্যরা জানান, পুলিশে নারীদের জন্য কর্মপরিবেশ আগের চেয়ে উন্নত হলেও তা সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে কনস্টেবল, নায়েক, এএসআই, এসআইদের মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের সভাপতি আমেনা বেগম যুগান্তরকে বলেন, আমরা কনস্টেবল থেকে শুরু করে সব র্যাংকের নারীদের নিয়ে কাজ করি। কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে নারীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পুরুষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং নারীর সংখ্যায় কম হওয়া। কারণ পুলিশের মোট জনবলের চেয়ে নারীর সংখ্যা মাত্র ৭ ভাগ। এটা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ হলে ভালো হবে বলে আমরা মনে করি।