ঢাকাশুক্রবার , ৫ মার্চ ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

লালমনিরহাটে ইউনুছ কাজীর কুকীর্তি ফাঁস: নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মার্চ ৫, ২০২১ ৬:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলাধীন বুড়িমারী স্থলবন্দর আলিম মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইউনূছ আলী (কাজী)। তিনি পাটগ্রাম ঈমাম সমিতির সভাপতি। ইউনূছ আলী (কাজী’র) বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ উঠেছে।

কাজী ইউনূছ আলীর ধোঁকায় এক গৃহবধূ। শরিয়ত মোতাবেক কাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী দাবিদার এক গৃহবধূ সম্প্রতি গোপন সব তথ্য ও কুকীর্তি ফাঁস করে দিয়েছেন। গত ১৫ দিন আগে পাটগ্রাম পৌরসভার রহমানপুর এলাকায় কাজীর বাড়ীতে স্ত্রী’র মর্যাদা চাইতে গিয়ে বেদম মারপিট ও অমানসিক নির্যাতনের শিকার হন ওই গৃহবধূ। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী একজন মুসলিম বিবাহ এবং তালাক নিবন্ধন কারিকে রেজিষ্ট্রার (কাজী) বলা হয়। তিনি তার ব্যক্তিগত অফিসে বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন রেজিষ্ট্রার ছাড়া কোন ভাবেই কাজী অফিস লেখতে পারেন না এবং তার পাশাপাশি এমপিও ভুক্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করিতে পারেনা। আইনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে ইউনূছ আলী পাটগ্রাম পৌর শহরের বাইপাস মোড়ে চোখ-ধা-ধা-লো (কাজী অফিস) লেখা সম্বলিত সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।

তাছাড়াও তিনি পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর আলিম মাদ্রাসার সুপারিন্টেনডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একই ব্যক্তি সরকারের আইন মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে চাকুরী করে আসছে। সরকারী নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই চলছে বছরের পর বছর। তার খুটির জোড় কোথায় প্রশাসন তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে সব তথ্য ও প্রমাণ। ২০১৮ সালে একাধিক বিয়ের কাবিন নামা রেজিস্ট্রার ভলিয়ম কেটে জালিয়াতি করে দেনমোহর কম-বেশি করার অপরাধে ইউনুস আলীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে। জানা গেছে, বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব অনেক। রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বিয়ের একটি প্রামাণ্য দলিল। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধিকরণ) আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী বিয়ে অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। ইউনূছ কাজী ঈমাম কমিটি’র সভাপতি হিসেবে পরিচিত। তিনি পাটগ্রাম পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজী)। উক্ত অফিসে ১৭ জুন নিজ স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন পাটগ্রামের বেংকান্দা গ্রামের জনৈক শাহীন। সংসার জীবনে স্ত্রী’র সাথে বনিবনা না হওয়ায় তালাক দেন। স্বামীর তালাক নামা হাতে পেয়ে স্ত্রী যোগাযোগ করেন কাজী অফিসে। কাজী তাকে বিভিন্ন কুপরামর্শ ও অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেন। সংসার জীবনে ৩ সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারও সংসার করতে চান সেই গৃহবধূ। তাছাড়াও বিয়ের সময় দেনমোহর ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ৩৫ হাজার টাকা কেন লেখা হয়েছে তা কাজীর কাছে জানতে চান তালাকপ্রাপ্ত ওই গৃহবধূ। কাজী ওই সময় সু-উত্তর দিতে না পারলেও গৃহবধূর মোবাইল নস্বর নিয়ে বিদায় দেন। সেই থেকে চলে তাদের কথাবার্তা। ৩ সন্তানের জননী সুন্দরী গৃহবধূর উপর নোলক দৃষ্টি পড়ে কাজীর। তালাকপ্রাপ্ত স্বামী ও স্ত্রীর সংসার একত্রিত করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন সমাজের গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিরা। কিন্তু তার আগে কাজী ইউনূছ আলী প্রেম নিবেদন করেন ওই সুন্দরী গৃহবধূকে। বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে কাজী ওই গৃহবধূকে তার প্রেমের ফাঁদে ফেলে। কাজীর স্ত্রী বাসায় না থাকার সু-বাদে ওই গৃহবধূকে কাজী তার বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে কাজী ওযু করে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আরবী কায়দা’ বইয়ের একটা ছেড়া পাতা ছুঁয়ে গৃহবধূ’র সামনে শপথ করে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়ে গেলো বলে সৃষ্টিকর্তার দোহাই দেন। তারপর রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ওই গৃহবধুকে নিয়ে যান। তাকে স্ত্রী’র মর্যাদা দিয়ে ঘরে তুলবেন এবং একসাথে সংসার করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এ আশ্বাসবাণী দিয়ে কাজী দিনের পর দিন গৃহবধূে ধর্ষণ করে। কয়েক দিন পর কাজী যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ওই গৃহবধূ গোপনে রাতে কাজীর বাড়ীতে গিয়ে কাজীর সাথে দেখা করতে চাওয়ায় কাজীর লেলিয়ে দেয়া লোকজন গৃহবধূকে বেদম মারপিট করে। অমানসিক নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ’র শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়। এমনকি গৃহবধূর হাত-পা বেধে মুখে বিষ ঢেলে হত্যার চেস্টা করেন কাজীর লোকজন। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূ অচেতন হয়ে পড়ে, অচেতন অবস্থায় কাজীর লোকজন গৃহবধূকে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। (১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাটগ্রাম থানা পুলিশের একটি পিক আপ ভ্যানের সাহায্যে অচেতন অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ডাঃ কালী প্রসাদ রায় জানান, নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ পাটগ্রাম হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা চরম সংকটাপন্ন। গৃহবধূ বিষপান করেছিল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশের গাড়ীতে হাসপাতালে আনা হয়। অমানসিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ’ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে না পারায় অসুস্থতা বিবেচনা করে ক্যাথেটার লাগানো হয়েছিল। গৃহবধূকে
উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মাওলানা ইউনূছ আলীর সাথে ফোনে কথা হলে বলেন, সুন্দরী ওই গৃহবধূ তো দূরের থাক, কোন নারীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। ওই গৃহবধূ তার বিরুদ্ধে কারও প্ররোচনায় ষড়যন্ত্র করছেন। জীবনে অনেক পরিশ্রমের বিনিময় তিনি আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। নানান কারনে তারা আমার বিরুদ্ধে শক্রতা করছেন।

জেলা মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল হোসেন বলেন, আমি বাহিরে ছিলাম, আমি এলাকায় আসার পর ইউনূছ আলীর ঘটনাটি শুনেছি, তবে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।

উল্লেথ্য যে, পাটগ্রাম উপজেলার রসুলগঞ্জ গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে হাসনু আরা রিফার সাথে দহগ্রাম ইউনিয়নের নবীবর রহমানের ছেলে বাবুল হোসেনের গত বছরের ৩০ আগস্ট বিয়ে হয়। বিয়েতে ধার্যকৃত দেনমোহর ৪ লাখ ৫ শত ২৫ টাকার স্থান কেটে জালিয়াতি করে কমিয়ে ১ লাখ ৫ শত ২৫ টাকা করা হয়। মেয়ের পরিবারের অভিযোগ ছেলে পক্ষের নিকট টাকা নিয়ে এ কাজ করেছে কাজী ইউনুস।
তৎকালীন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নূর কুতুবুল আলম বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা যায় ০৯ নম্বর মূল ভলিয়মের ৬৪ নম্বরের ওই বিয়ের কাবিন নামায় দেনমোহরের পরিমাণে ব্লেড দিয়ে ঘসা মাজা করে প্রকৃত সংখ্যা পরিবর্তন করে অন্য অঙ্কের সংখ্যা বসানো হয়েছে।

পাবলিক ডকুমেন্ট ঘষা মাজা বা কাটা ছেড়া করে তথ্য বিকৃত করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই এবং আইন পরিপন্থি। তিনি জ্ঞাতসারে এ কাজ করায় সরকারি আদেশ অমান্যের অপরাধে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন