তথ্য অধিকার আইনে তথ্যের জন্য আবেদন করেও তথ্য না দেওয়ায় প্রথমবারের মতো লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভেলাবাড়ি কেরামতিয়া দাখিল মাদরাসার সুপারের বিরুদ্ধে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর অভিযোগটি দায়ের করেন মাহমুদুল হাসান।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার ভেলাবাড়ী কেরামতিয়া দাখিল মাদরাসার অফিস সহকারী এজাজুল ইসলাম তথ্য গোপন করে একাই দুই পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি মাদরাসায় অফিস সহকারীর পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এর আওতায় ভেলাবাড়ি ইউনিয়ন নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবেও ১৭/১৮ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। এক ব্যক্তি দুই পদে দায়িত্ব পালন দেখিয়ে সরকারি সুবিধা ও ভাতাদি উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন। যা শিক্ষক কর্মচারী এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর ১১.১০ (ক), ১৭.৩, ১৮ (গ) (চ), এবং ১৮.২ নম্বর শর্তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। দ্বৈত পেশার এ তথ্য গোপন রেখে অফিস সহকারী ও নিকাহ রেজিস্ট্রার এজাজুল ইসলামের এমপিওভুক্তিতে অবৈধ সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভেলাবাড়ি কেরামতিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আবু নোমান মো. নুরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
মাদরাসার অফিস সহকারী এজাজুল ইসলামের নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির বিষয়ে তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইনের নির্ধারিত ফরমে সুপার বরাবরে একটি আবেদন করেন দুর্গাপুরের মৃত সুলতান হোসেনের ছেলে মাহমুদুল হাসান।
আবেদন ফরমটি সরাসরি সুপার আবু নোমান মো. নুরুজ্জামানের কাছে জমা দিলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। বরংচ উল্টো তথ্য চেয়ে আবেদনকারী মাহমুদুল হাসানকে গালমন্দ ও দুর্ব্যবহার করেন। কর্তৃপক্ষ ছাড়া তিনি কাউকে তথ্য দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
অবশেষে মাহমুদুল হাসান তথ্য ফরমে তথ্য চেয়ে এবং তথ্য গোপন করার দায়ে সুপারের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করে বৃহস্পতিবার আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এটি ছিল তথ্য অধিকার আইনে তথ্য না পেয়ে এ উপজেলার প্রথম কোনো ভুক্তভোগীর অভিযোগ।
আবেদনকারী মাহমুদুল হাসান বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ কেউ কেউ অবৈধ সুযোগ নিয়ে একাই দুই পদে সরকারি সুবিধা নিয়ে আত্মসাৎ করছেন। লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় প্রায় ৩০/৩৫ জন নিকাহ রেজিস্ট্রার তথ্য গোপন করে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় বিভিন্ন পদে চাকরি করছেন। এক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতারা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি বেকারত্বও বাড়ছে। এ বিষয়ে তথ্য নিতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনটি গ্রহণ করেননি ভেলাবাড়ি কেরামতিয়া মাদরাসার সুপার। উল্টো আমাকে গালমন্দ করেছেন। ভেলাবাড়ি কেরামতিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আবু নোমান মো. নুরুজ্জামান বলেন, সরকার আইন করেছে, তারা সরকারের কাছ থেকে তথ্য নেবেন। আমি কর্তৃপক্ষ ছাড়া কাউকে তথ্য দিতে বাধ্য নই। যিনি আবেদন করেছেন, তিনি আমার কর্তৃপক্ষ নন। সুতরাং আমি তাকে তথ্য দিইনি, দেবোও না। তবে তথ্য গোপন করে দ্বৈত পেশার বিষয়ে সুপার বলেন, আমি জানি আমার অফিস সহকারী এজাজুল নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তো কোনো দিন তার এ তথ্য জানতে চায়নি। তাই দেওয়া হয়নি।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য না দেওয়া ঠিক হয়নি। দ্বৈত পেশায় সরকারি সুবিধা গ্রহণও বিধি সম্মত নয়। অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।