টেকনাফ প্রতিনিধি।। অনেকের কাছে ‘টেকনাফ পাড়া’ হিসেবেও পরিচিত। যা মাদক কারবারিদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। কিন্তু বছর তিনেক আগেও এই এলাকা হাজী ইসলামের বাড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন গলিতে ছিলো না এতো বেশি পাকা দালান।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পাইকারি দরে ইয়াবা কিনে এনে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন ওই গলির অনেক বাসিন্দা। ভাই-ভাই, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধু-বন্ধু, বাবা-ছেলে সিন্ডিকেট তৈরি করে ওই গলিতে ইয়াবার ব্যবসা করেন।
জানা যায়, দিনে কমপক্ষে হাজারের বেশি ইয়াবা বেচাকেনা হয় এই টেকনাফ গলিকে ঘিরে। ওই গলির অনেক মাদক কারবারি রাতারাতি বিত্তশালী বনে গেছেন।
এই এলাকায় বেশিরভাগই প্রকাশ্যে ইয়াবা বেচাকেনায় জড়িত রয়েছে। এ গলির ১০ জন মাদক ব্যবসায়ী কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পাইকারি দরে ইয়াবা কিনে আনেন। তারা ১২০ টাকা দরে সেটা পাশের দাম্মা পুকুর পাড়ের ১৪ জনের খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। তারা আবার মাদকসেবীদের কাছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা করে খুচরা বিক্রি করেন।
বিশেষ করে বাবু নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর শ্বশুরবাড়ি টেকনাফ হওয়ায় সেখান থেকে পাইকারি ইয়াবা এনে থাকেন বলে সূত্র জানায়।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফে ঘরে ঘরে ইয়াবা বিক্রির কথা আমরা শুনে এসেছি। কিন্তু চট্টগ্রামের পাঠানটুলি এলাকার একটি গলিতে ঘরে ঘরে ইয়াবার পাইকারি ও খুচরা বেচাকেনা হয়। অবস্থা এমন যে, ওই গলির নামই এখন লোকেমুখে হয়ে গেছে নিউ টেকনাফ গলি।
ওসি বলেন, আমরা রোববার রাতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এর আগে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। এছাড়া টেকনাফ গলি ও দাম্মা পুকুর পাড় এলাকার মোট ২৪ ইয়াবা বিক্রেতার নাম পেয়েছি।
এদিকে গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতভর অভিযান চালিয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন- মো. খোকন (৩৫) ও তার স্ত্রী কোহিনূর আক্তার মুন্নি (২৭), ফরিদা বেগম (৩২) ও সাইফুল ইসলাম (৩৪)। তাদের মধ্যে প্রথম তিনজন বিক্রেতা হলেও সাইফুল ইয়াবা কিনতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন।
এছাড়া চারজনকে গ্রেপ্তারের পরদিন রাতে অভিযান চালিয়ে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মহসীন।
এদিকে সূত্র জানায়, নিউ টেকনাফ গলিতে পাইকারি ইয়াবা বিক্রি করে এমন ১০ জনের তালিকা রয়েছে ডবলমুরিং থানা পুলিশের কাছে। তারা হলেন- বাবু, মোরশেদ, রোকেয়া, অভি, তৌকির, জিতু, রহিম, জোবেল ও ফরিদা। এদের মধ্যে মোরশেদের স্ত্রী ফরিদাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও তার স্বামী মোরশেদ পালিয়ে গেছেন।
অন্যদিকে, টেকনাফ গলি থেকে পাইকারি ইয়াবা কিনে দাম্মা পুকুর পাড়ে মাদকসেবীদের কাছে খুচরা বিক্রি করেন এমন ১৪ ব্যবসায়ীর তালিকা করেছে পুলিশ। তারা হলেন- পিংকু, রবিন, সামশু, ইকবাল, জাহিদ, রিপন, সালমা ওরফে টুনটুনি, জিসান, আনোয়ার, ইদু, শুভ, ওয়াসিম, পারভীন, খোকন ও মুন্নী। এদের মধ্যে খোকন ও মুন্নীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন মাদক কারবারিদের তালিকার বিষয়টি পুলিশের কাছে আছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গলির ১০ জন মাদক ব্যবসায়ী কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পাইকারি দরে ইয়াবা কিনে আনেন। তাদের তালিকা পুলিশের কাছে আছে। এছাড়া পাশের দাম্মা পুকুর পাড়ের ১৪ জনের খুচরা বিক্রেতার তালিকাও আছে। তাদের ধরতে পুলিশি কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
গ্রেপ্তার খুচরা বিক্রেতা মুন্নী বলেন, আমি ফরিদা আপা, বাবুসহ অনেকের কাছ থেকে ইয়াবা কিনে তা বিক্রি করতাম। আর ইয়াবা বিক্রির টাকা আমার স্বামীর জন্যই ব্যয় হতো। তাকে দিনে কমপক্ষে ২০টা ট্যাবলেট দিতে হতো।
এ বিষয়ে মুন্নীর স্বামী খোকন বলেন, আমার ভুল হয়েছে। এবার জেল থেকে বের হয়ে আমি এ পথ ছেড়ে দিবো।
ওসি মহসীন বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সুপথে ফিরে আসতে চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো। আর মাদকের বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানা পুলিশ যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তা টেকনাফ গলি থেকেই শুরু হয়েছে। তা নির্মূল করা হবে।