ঢাকাবুধবার , ১৩ জানুয়ারি ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আ’লীগ কর্মীর মৃত্যু : পোস্টার ছেঁড়ার জবাব গুলিতে দিলো বিদ্রোহীরা!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জানুয়ারি ১৩, ২০২১ ৩:২৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগ নেতাদের নানান তর্জন গর্জনের পরেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বাগে রাখা যায়নি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের। তাই নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়ার আগে নিজ দলের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেই মাঠে নামতে হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের।

এ নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল শুরু থেকেই। সে আশঙ্কাকে সত্য করে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতায় এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন।

জানা গেছে, চসিক নির্বাচনকে ঘিরে কয়েকদিন ধরে ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এর মাঝেই সোমবার রাতে মতিয়ারপোল আবেদিয়া স্কুল সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার সমর্থকরা বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন আবদুল কাদেরের সমর্থকরা।

এ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন বিদ্রোহী প্রার্থী কাদের। কিন্তু পোস্টার ছেঁড়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটায় পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী কাদেরের সমর্থকদের হামলায় প্রাণ হারান স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী আজগর আলী বাবুল (৫৫)।

সোমবার রাতে ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মতিয়ারপোল আবেদিয়া স্কুল সংলগ্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থক কর্তৃক বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের পোস্টার ছেঁড়ার একটি ভিডিও ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে।

সেখানে দেখা যায়, রাত আটটা ৪৫ মিনিটের দিকে মতিয়ারপোল আবেদিয়া স্কুলের পাশে দোকানে এবং পথচারীদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম বাহাদুর। এ সময় তার এক সমর্থককে দেখা যায়, গলির মধ্যে প্রবেশ করে রাস্তার উপর আড়াআড়িভাবে ঝুলানো বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কাদেরের ছবি ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার টেনে টেনে ছিঁড়ে ফেলছেন।

বিদ্রোহী প্রার্থী কাদেরের সমর্থকদের অভিযোগ, সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর মতিয়ার পুল থেকে কদমতলী পর্যন্ত গণসংযোগ করেন। এ সময় বাহাদুরের উপস্থিতিতে তার সমর্থিত কর্মীরা এসব এলাকায় লাগানো আব্দুল কাদেরের সব পোস্টার প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেন। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন কাদের।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর (প্রতীক রেডিও) সমর্থিত কর্মী মোস্তফা কামাল টিপু, মাহাবুব, ইকবাল, সাহেদ, জাবেদ, ফয়সাল, দেলোয়ারসহ বেশ কয়েকজন সোমবার রাতে কাদেরের নির্বাচনী এলাকা মতিয়ার পুল থেকে কদমতলী পর্যন্ত তার সব নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছেন। পাশাপাশি তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও হামলা চালিয়েছেন নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থকরা।

মঙ্গলবার এ উত্তেজনা চলার মাঝেই বিকেলে প্রতিপক্ষের ওপর হামলার জন্য বানানো বেশ কিছু লোহার তৈরি ব্যাডমিন্টন ব্যাট জব্দ করে পুলিশ। কিন্তু সে সময় জাগো নিউজের পক্ষ থেকে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে ‘ওসব কিছু না’ বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ। পরে রাত সোয়া আটটায় পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগপুকুর পাড় এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে আওয়ামী লীগ কর্মী বাবুল নিহত হন।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আরও এক যুবলীগ কর্মীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নজরুল ইসলাম বাহাদুর নিহত বাবুলকে নিজের কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন। সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার রাতভর নগরের ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করে পুলিশ।

সংঘর্ষ সম্পর্কে নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, ‘রাতে গণসংযোগকালে পাঠানটুলির মগপুকুর এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরের অনুসারীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় গুলি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও মহল্লার সর্দার বাবুলকে হত্যা করেছে তারা। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে এ সময় যুবলীগ কর্মী মাহবুব গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’

এদিকে আটকের আগে বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদের মুঠোফোনে বলেছিলেন, ‘আমার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আবু শাহ মাজার এলাকায় গণসংযোগ করছিলাম। রাত আটটার দিকে আমার অনুসারীদের আচমকা ধাওয়া করে নজরুল ইসলাম বাহাদুরের অনুসারীরা। এরপর তারা গুলি ছুঁড়লে আমি বাসার ভেতরে অবস্থান নিই। যে মারা গেছে সে বিরোধী পক্ষের কর্মী। কিন্তু কীভাবে মারা গেছে তা আমরা জানি না।’

সংঘর্ষে জড়ানো কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আব্দুল কাদের ও নজরুল ইসলাম বাহাদুর দুজনই ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল কাদের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে নজরুল ইসলাম বাহাদুর শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আব্দুল কাদের এর আগে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাউন্সিলর ছিলেন।

প্রসঙ্গত, দফায় দফায় হুঁশিয়ারির পরেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে থেকে গেছেন। ফলে নগরীর সাধারণ ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশেই এবার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর শক্ত বিরোধিতার মুখে পড়তে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। এর মধ্যে ১২টি ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলররাই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে থাকছেন। এর বাইরে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন।

কাউন্সিলর পদে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে যারা নির্বাচন করছেন, তারা হলেন- ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের সাহেদ ইকবাল বাবু, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জহুরুল আলম জসীম, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডের মোরশেদ আক্তার চৌধুরী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে সাবের আহমেদ, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডের এফ কবির মানিক, ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের এসএম এরশাদ উল্লাহ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের এইচএম সোহেল, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডের আব্দুল কাদের, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তারেক সোলায়মান সেলিম, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডের হাসান মুরাদ বিপ্লব ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তারা অধিকাংশই চসিকের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুন