রাশেদুল ইসলাম রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষক। আর এ জন্য দরকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন। সে জন্য নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে চলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে (ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম) বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ।
শিক্ষকেরাও নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অনুমতিপত্র নিয়ে অংশ নিয়েছেন তাতে। কিন্তু গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের দুই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন এক শিক্ষক। বিনিময়ে উৎকোচ নিয়ে স্ববেতনে ১০ মাসের ছুটি দিয়েছেন মাদরাসার সুপার। ডিপ্লোমা করা কৃষি শিক্ষকের ওই সনদ দিয়ে বিএড করার নিয়ম নেই। কিন্তু তবুও শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটিয়ে অনিয়ম করে দীর্ঘদিনের ছুটি দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার সোনারহাট দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা কৃষি (বিএজিএড) সিনিয়র শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম (ইনডেক্স নাম্বার:আর২০১৯৬০১) যোগদান করেছিলেন ২০০৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। টাইম স্কেল ও সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী পদোন্নতি পেয়ে যার বেতন কোড এখন ৮ম। অর্থাৎ শিক্ষক হিসেবে এটাই তার সর্বোচ্চ বেতন কোড। অথচ প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে নয় বরং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত স্বার্থে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্ববেতনে ১০ মাসের ছুটি নেন তিনি। বিএড করছেন সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রংপুরে। শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচারাল এডুকেশন (বিএজিএড) বা কৃষি বিষয়ের সাথে ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) এর কোনো সম্পর্ক নেই। আর তা করা সম্ভবও না।
জানা যায়, ওই সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
থেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সুন্দরগঞ্জ আমিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে চলমান ৫ দিনব্যাপী শিক্ষক প্রশিক্ষণে (জীবন ও জীবিকা) অংশ নিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলছেন, জানুয়ারিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো পাঠদানও করেননি জাহাঙ্গীর। সর্বোচ্চ স্কেল প্রাপ্তির পরেও কৃষি ডিপ্লোমা(বিএজিএড) করা কৃষি বিষয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষকের বিএড করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত স্বার্থে করা। এতে চলতি শিক্ষাবর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে ওই সিনিয়র শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাদরাসা ভালো লাগেনা। তাই বিএড করছি অন্যত্র সহকারী হেডমাস্টার হিসেবে ঢোকার জন্য। একই সময়ে দুই জায়গায় প্রশিক্ষণ নেওয়া যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুমতি নিয়েছি, প্রক্সির জন্য টাকা দেই।
এদিকে, গত মঙ্গলবার ৫ দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও বুধবার ফোন করলে তা অস্বীকার করেন মাদরাসার সুপার মো. আতাউর রহমান। তিনি বলেন, আমি কোনো অনুমতি দেইনি। নতুন করে তার বিএড করা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজে আসবে না। এটা তার ব্যক্তিগত স্বার্থে করা। প্রক্সির জন্য মাসে ৫-৬ হাজার টাকা দেয়। তিনি আরও বলেন, একই সাথে দুইখানে প্রশিক্ষণ নেওয়া ঠিক নয়। তাই আজ আর ট্রেনিং নিচ্ছে না। সেই দিন (বুধবার সকাল ১১.৩৮) তিনি সোনারায় বাজারে আছেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন ওই শিক্ষক।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, অন্যত্র যেতে বিএড করা! এটা বোকার মতো কথা বলা। তবে অনুমতি ছাড়া প্রশিক্ষণে নেওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে রংপুর সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আমজাদ হোসেন বলেন, একইসঙ্গে দুটি প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন না। আর কৃষি (বিএজিএড) শিক্ষক বিএড করার বিষয়টি দেখতে হবে।