স্টাফ রিপোর্টার:: রেকর্ড গড়েছিলেন আগেই। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই রেকর্ডকে আরও উঁচুতে তুলে নিয়েছিলেন। এবারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সেই রেকর্ডকে যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দ্বাদশ নির্বাচনের জয়ের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারে মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। আর সব মিলিয়ে তিনি পঞ্চমবারের মতো হবেন সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারপ্রধান। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে অন্তত ২২৫টি আসনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাই উপভোগ করবেন দ্বাদশ সংসদে।
এর আগে কেবল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই পূর্ণ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সেই বিতর্কিত নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সরকারকে বিবেচনায় নিলেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া দায়িত্ব পালন করেছেন তিনবার। সেখানে শেখ হাসিনা এবার টানা চতুর্থ জয় তুলে নিলেন জাতীয় নির্বাচনে। তাতে তার পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগও উন্মুক্ত হলো। তবে জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কে হবে তা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২৫টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৬১টি আসনে। তাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতা। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। আর অন্যান্য দল জিতেছে একটি আসনে।
এদিকে সংসদের প্রধান বিরোধী জাতীয় পার্টি এত কম আসনে জয়ী হওয়ায় বিরোধী দল কে হবে সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনেক নাটকীয়তা, দেনদরবারের পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। সব মিলে এবার ২৬৫টি আসনে দলটির প্রার্থী ছিল। শেষ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া ২৬ আসনের ১১টিতে জিততে পেরেছেন জাপার প্রার্থীরা। সমঝোতার বাইরে কোনো আসনে দলের প্রার্থী জিততে পারেননি।
ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কমলো। বর্তমানে দলটির ২৩ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন।
সংসদের তিনশটি আসনের মধ্যে এককভাবে ১৫১টি আসন পেলে সরকার গঠন করতে পারে একটি রাজনৈতিক দল৷ এর চেয়ে কম আসন পেলে অন্য দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ আবারও দুই তৃতীয়াংশ আসন পাওয়ায় সেসব নিয়ে আরো কোনো জল্পনার অবকাশ নেই৷
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে স্লোগান হলো: ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান৷’ দলটি এবার তার ইশতেহারে নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থান তৈরি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ মোট ১১টি বিষয়ের ওপর বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার আত্মপ্রকাশ:
১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷ তবে, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ একভাবে ১৫১টি আসন না পাওয়ায় জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি৷ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ২১ বছর পর সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা৷
এরপর ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কাছে পরাস্ত হয় দলটি৷ শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ হয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল৷
নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷ দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন৷
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় ও মোট তিন মেয়াদে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ৷ সেই সরকারেও প্রধান হন শেখ হাসিনা৷ ওই নির্বাচনে অবশ্য অংশ নেয়নি বিএনপিসহ বেশকয়েকটি দল৷
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল বিএনপি৷ শেষ পর্যন্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে দলটি৷ সংলাপে অংশ নেয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে৷ তারপর নির্বাচনে আসতে রাজি হয় তারা৷ সেই নির্বাচনেও ভূমিধস জয় পায় আওয়ামী লীগ৷ সেই ভোট নিয়ে অবশ্য আছে নানা বিতর্ক৷
ওই নির্বাচনে জয়ের পর টানা তৃতীয় ও মোট চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে৷ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হ্যাট্রিক জয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷ সেই সরকারেরও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা৷
এবারও বিএনপির নির্বাচন বর্জন:
৭ জানুয়ারি হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকা বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছে৷ এছাড়াও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরো ১৫টি দল নির্বাচন বর্জন করেছে৷ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত মোট ২৮টি দল৷