রাশেদুল ইসলাম রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টার:: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আমগঞ্জ কাজী তোফাজ্জল হোসেন দ্বি-মূখী আলিম মাদরাসায় জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত টাকা কাজ না করেই ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জাতীয় পার্টির দুই নেতার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মমিন মন্ডল প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, মাদরাসাটির দক্ষিণের সেমি বিল্ডিং-এর কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের অজান্তেই ৯ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয় জেলা পরিষদ। যার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় কাজী ট্রেডার্স নামে গাইবান্ধার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আ ন ম মোজাম্মেল হকের সাথে যোগাযোগ করেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মন্ডল এবং বামনডাঙা ইউনিয়ন জাপা সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা। সেমি বিল্ডিং-এর জন্য ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষের নিকট শর্ত জুড়ে দেন বরাদ্দ ৯ লাখ হলেও দেওয়া হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কাজ করতে হবে নিজে এবং স্বাক্ষর করতে হবে সব কাগজপত্রে।
ভাগাভাগির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শর্ত না মানলে তারা কাজটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিলে অধ্যক্ষ মাদরাসার কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে তাদের বেধে দেওয়া শর্ত মেনে নেন।
শর্ত মানায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজী রিপন এবং জাপার ওই দুই নেতা সব কাগজপত্রে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে তার হাতে নগদ ১ লাখ ৬০ হাজার এবং ২ লাখ টাকার একটি চেক প্রদান করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি কর্তৃক গত ৯ জুন উদ্বোধন করা হয়েছে এমন একটি ফলক। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে যেখানে সেমি বিল্ডিং করার কথা সেই টিনসেড পরিত্যক্ত ঘরটির সামনে কয়েক হাজার ইট ছাড়া কাজের কোনো অস্তিস্ত নেই।
অধ্যক্ষ আ ন ম মোজাম্মেল হক বলেন, বরাদ্দ হয়েছে আমি জানি না। ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে জাপা নেতা আব্দুল মান্নান ও রেজাউল আমার কাছে এসেছিল। তারা বলেছিল ঠিকাদার কাজ করবে না। নয় লাখের মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া হবে না। রাজী না হলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেব। আমরাও ভাবলাম ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।’ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। দুই লাখ টাকার একটা চেক দিয়েছে। সেই একাউন্টেও আবার টাকা নেই। এখন পর্যন্ত খালি ঘুরাচ্ছে ঠিকাদার।
বরাদ্দের টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে কথা হলে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মন্ডল জানান, সেখানে জেলা পরিষদের বরাদ্দ আছে এটা যেমন সত্য, পাশাপাশি এই বরাদ্দের সাথে জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্তা নেই। তবে হ্যাঁ, এমপি যেহেতু জাতীয় পার্টির সেই ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী এটা জানার চেষ্টা করেছে। আমি প্রিন্সিপালের সাথেও এটা জানার চেষ্টা করেছি। কোনো এক সময় ঠিকাদার সেখানে আসে, তারা নিজে কাজ করবে না প্রিন্সিপালকে দিয়ে করাবে। সেই মর্মে একটা চেকও দেয়। কিন্তু এটার সাথে জাতীয় পার্টির লোকজনের ভাগাভাগির কোনো সম্পর্ক নেই। ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি চেক দেওয়া হয়েছে। সেখানে কথা ছিল আরও কিছু টাকা দিবে। তার আগেই এমপি মহোদয় সেটা উদ্বোধন করেছে।
পরে মুঠোফোনে কথা হয় জাপা নেতা রেজাউল ইসলাম রেজার সাথে। তিনি অভিযোগ গুলো মিথ্যা দাবি করে প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে বলেন , আমরা গিয়েছিলাম এটা সত্য। শুধু মাত্র লাল চা আর বিস্কুট খেয়েছি ওই মাদরাসায়। টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে ঠিকাদার কাজী রিপন বলেন, আমরা কাজ করি না। শুধু মাল-সামানা সাপ্লাই দেই। ৯ লাখের মধ্যে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে তিনি পরে পার্টনারের সাথে কথা বলে জানাবেন জানিয়ে দেন।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল মমিন মন্ডল প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে বলেন, এবিষয়ে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।