আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। লালমনিরহাটে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তিস্তাপাড়ের কৃষকের স্বপ্নের ফসল আমন ধানসহ নানান জাতের সবজি।
জানা গেছে, ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাট অর্থনীতির সিংহ ভাগ আসে কৃষি থেকে। জেলার বেশির ভাগ পরিবার কৃষির উপর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তিস্তা ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাট ৫টি উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা আর ধরলা নদী।
ধান, ভুট্টা, পাট আর নানান জাতের সবজি জেলার চাষাবাদ করা ফসলের মধ্যে অন্যতম। কম খরচে চাষাবাদ হওয়ায় আমন ধান এ জেলার কৃষকের বড় স্বপ্নের ফসল। তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হয়েছে আমন ধান। কৃষকের স্বপ্নের সেই ফসল আমন ধান মধ্য বয়সী হতেই বন্যা আর ভারি বৃষ্টির পানিতে ডুবেছে। তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ কমে আসলে নদীতেও কমে যায় পানি। কিন্তু বন্যার সময় আমন ক্ষেতে প্রবেশ করা পানি পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে নামছে অনেকটা ধীর গতিতে। ফলে বাড়ির পানি নেমে গেলেও আমন ক্ষেতের পানি যেন নামছে না। ফলে টানা ৫/৬ দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে ক্ষেতের ফসল। দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকায় পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। জেলার অধিকাংশ আমন ক্ষেত এখন পর্যন্ত পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। যদিও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে গত ২ দিন আগে।
গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক বুলবুল আহমেদ বলেন, শুধু আমার আমন ক্ষেত নয়, পুরো এলাকার সবার ক্ষেত আজ ৬ দিন ধরে ডুবে আছে। ক্ষেতে জমেছে বন্যায় ভেসে আসা কচুরিপানা আর আবর্জনা। পানি কমলে কচুরিপানা সরানো যাবে। কিন্তু এরই মধ্যে আমন ধান গাছ পচে নষ্ট হচ্ছে। প্রতি ২৭ শতাংশ জমিতে প্রতিবছর ১৪/১৫ মণ করে ধান আসে। আমন চাষে সেচ খরচ নেই। তাই ফলন কম হলেও বেশ লাভ হয়। তবে এবার উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা বাড়িতে চিড়া মুড়ি খাওয়ার মতোও ধান আসবে না।
বালাপাড়া গ্রামের কৃষক ডলার জানান, বন্যার পানি শুধু নয়, বৃষ্টির পানিতেও ডুবে আছে বিস্তীর্ণ এলাকার আমন ধান ক্ষেত। এসব এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই কম। তাই নদীতে পানি কমলেও এসব পানি নামছে খুবই ধীর গতিতে। ফলে আমন ধান পচে নষ্ট হচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্ল্যারহাট এলাকার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, আমন ক্ষেতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা না থাকায় সব ধান পঁচে গলে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিস্তানদী সংস্কার করা হলে আমরা এই ক্ষতির হাত থেকে বেচে যেতাম।
সদর উপজেলার রাজপুর মাটেরপাড় এলাকার কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, কয়েকদিন থেকে আমার আমন ক্ষেত পানির নিচে রয়েছে, নদীর পানি কিছুটা কমলেও ক্ষেতের পানি ধীর গতিতে কমছে। ধান ক্ষেত পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে, বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কি ভাবে সংসার চলাব সেই চিন্তায় করছি।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, গত বন্যায় জেলার ৯৪০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। যার মধ্যে ২০ হেক্টর সবজি আর বাকি সব রোপা আমন। নষ্ট হওয়া ক্ষেতে নতুন করে আমন রোপণ করার সুযোগ নেই। তাই এসব জমিতে আগাম ভুট্টাসহ সবজি চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে সব এলাকায় পানি নিষ্কাশন অভাবে ক্ষেত ডুবে আছে। সেই সব এলাকায় কৃষি অফিসাররা তদন্ত করে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ মাছ আহরণের জন্য পানির পথ বন্ধ করে থাকলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।