ঢাকারবিবার , ২৭ আগস্ট ২০২৩
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শেরপুরে আগের মতো দেখা মিলছে না জাতীয় পাখি দোয়েলের

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
আগস্ট ২৭, ২০২৩ ৩:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আরফান আলী, শ্রীবরদী (শেরপুর): শেরপুরের শ্রীবরদীসহ আশেপাশের উপজেলাতে এক সময় গ্রাম-গঞ্জের মাঠে-ঘাটে, বনে জঙ্গলে, গাছে গাছে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ নানা ধরনের পাখি দেখা গেলেও কালের বিবর্তনে এখন আর চিরচেনা সেই জাতীয় পাখি দেখা যায় না। পাখি দেখার কলরবে মুখর গ্রামের মেঠো পথ এখন পাখিশূন্য হতে চলছে।

বনে জঙ্গলে গাছে পাখি দেখার সেই অপরূপ দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। বনাঞ্চলের পরিবেশ দূষণ, নির্বিচারে গাছ কাটা, জমিতে কীটনাশকের যথেষ্ট ব্যবহার, পাখির বিচরণ ক্ষেত্র ও খাদ্য সংকট আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্তির পথে বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকবছর আগেও মানুষের ঘুম ভাঙ্গতো পাখির ডাকে। তখন বোঝা যেত ভোর হয়েছে। পাখির কলকাকলিই বলে দিত এখন সকাল, শুরু হক দৈনন্দিন কর্মব্যস্থতা। কিন্তু এখন যেন পাখির ডাক হারিয়ে গেছে। এখন গাছ-গাছালিতে পাখির ডাক নেই।
এ ব্যপারে বালুঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন জানান, দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতির সঙ্গে জড়িত সেসব পাখিগুলোর ডাক ও সুর মানুষকে মুগ্ধ করতো সেই পাখিই ক্রমান্বয়ই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষ করে দোয়েল পাখির এখন আর দেখাই মিলছে না। বাড়ির আনাচে-কানাচে যদি গাছ লাগানো হয় তবে পাখির অভয়ারণ্য গঠিত হবে। পাখি সংরক্ষিত থাকবে, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও ফিরে আসবে।

কয়েকজন বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দোয়েল, ময়না, কোকিল, শালিক, চড়ইসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি গ্রামমাঞ্চলের বিলে-ঝিলে, ঝোপে-ঝাড়ে, গাছের ডালে, বাগানে কিংবা বাড়ির আঙ্গিনার ডালে বসে তার সুরের ধ্বনিতে মুগ্ধ করে। এই পাখির চিচির-মিছির শীর্ষ দেওয়া শব্দ এখন আর কানে শোনা যায় না। সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় বাশ গাছে, আমের ডালে, সজিনা গাছে, বাড়ির ছাদে যে পাখি সব সময় দেখা যেত সেই পাখি এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কম সংখ্যক টিয়া, ঘুঘু, কাক, মাছরাঙ্গা, ইত্যাদি পাখি শহর, গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও জাতীয় পাখি দোয়েল তেমন আর মানুষের চোখে পড়ে না। তাই পাখিপ্রিয় অনেক সৌখিন মানুষের বাড়ির খাচায় বন্দি করে পাখি পালন করতে দেখা যায়। সৌখিন পাখি পালনকারীরা জানান, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্ম ওই পাখি দেখতে পান না, তাছাড়া শিকারীদের দৌরাত্মের কারণে পাখিশূন্য হয়ে পড়েছে বনাঞ্চল। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতে বসেই বেশ কিছু প্রজাতির পাখি পালন করেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম পাখি সম্পর্কে জানতে পারে।

সচেতন মহল মনে করেছেন, নদী ভাঙনের ফলে ফসলি জমিতে উঠছে ঘরবাড়ি, তাছাড়া জনসংখ্যা প্রভাবেও কোথাও না কোথায়ও প্রতিদিন নতুন নতুন ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে গাছ কেটে বন উজার করে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তাই আগের মতো বনে জঙ্গলে তেমন পাখির দেখা মিলছে না। কৃষক অকবর হোসেন হাওলাদার বলেন, জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পাখি মরে যাচ্ছে। আবার খাদ্য সংকট ও আভাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না, এতে কমে যাচ্ছে পাখি। তাই পরিবেশ রক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। বেশি মুনাফার আশায় বনে চোরা শিকারীরা বিভিন্ন ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে শিকারের হাত থেকে বাঁচাতে জীবন রক্ষার্থে পাখি অন্যত্র চলে যাচ্ছে। অনেক সময় তাদের হাতে মারাও যাচ্ছে পাখি। অথচ প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই।

এ বিষয়ে শ্রীবরদী সরকারি কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী হাসানুজ্জামান জানান, প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন – IUCN ( International Union for Conservation of Nature and Natural resources) অনুযায়ী বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল (Magpie robin) বিলুপ্তপ্রায় পাখির কাতারে পড়েনা। এমনকি এরা বিলুপ্তির শঙ্কাতেও নেই।

আইইউসিএন এর ভাষ্যমতে জাতীয় পাখি দোয়েল এখনো বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে আছে। নিকট ভবিষ্যতেও বিলুপ্তির কোন শঙ্কা নেই।

তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ফসলে কীটনাশক ব্যবহার, আবাসস্থল কমে যাওয়া, ফাঁদে আটকানো, ইত্যাদি কারণে সংখ্যা কমতে পারে। বাংলাদেশের সব আবাসেই দোয়েলকে দেখা যায় বলে একে জাতীয় পাখি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। উপমহাদেশের প্রখ্যাত পাখি বিশারদ প্রফেসর কাজী জাকের হোসেন দোয়েলকে জাতীয় পাখি করার প্রস্তাবনা করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন