আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও তা নিচে নামতে শুরু করেছে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।
শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ১২টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ মিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিকাল ৩ টায় তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়
ডালিয়া পয়ে ন্ট -পানির সমতল ৫১.৯৮ মিটার (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১৭ সে.মি নিচে। কাউনিয়া পয়েন্ট – পানির সমতল ২৯.২২ মিটার, (বিপদসীমা =২৮.৭৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৪৭ সেঃমিঃ উপরে। ধরলা নদীঃ শিমুলবাড়ি পয়েন্ট -পানি সমতল ২৯.৭২ মিটার, (বিপদসীমা = ৩১.০৯ মিটার) যা বিপদসীমার ১৩৭ সেঃমিঃ নিচে। পাটগ্রাম পয়েন্ট -পানি সমতল ৫৮.২৬০ মিটার (বিপদসীমা =৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ২০৯ সেঃমি নিচে। লালমনিরহাটে গতকাল সকাল ৮.০০টা হতে আজ সকাল ৮.০০টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ১০৭ মিলিমিটার।
এর আগে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টা বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল বামতীরের জেলার হাজার হাজার পরিবার।
ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত কয়েকদিন থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকে, পরে শুক্রবার সকাল ৯ টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা বরাবরে প্রবাহিত হয়। ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে তিন ঘণ্টা পরে দুপুর ১২ টায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উজানে ভারী বর্ষণ ও ভারতের গজলডোবায় তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় উজানের ঢেউ বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।
নদীপাড়ের মানুষজন জানায়, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাট জেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আবাদকৃত ফসলের ক্ষেতে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। যার সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ডুবে গেছে বন্যার পানিতে।
টানা ২৪ ঘণ্টা তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টা পরে শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় এ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। ফলে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বৃষ্টি থাকায় পানি ধীর গতিতে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানিবন্দি পরিবারগুলো মুক্তি পেতে বেশ সময় লাগছে।
গোবর্দ্ধন এলাকার রবিউল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বাড়ছে তিস্তায়। নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চল গুলো প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের ক্ষেত রাস্তাঘাট ও পুকুর। চরাঞ্চলে হেঁটে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়কে জাল ফেলে মাছ ধরছে মানুষ।
হলদিবাড়ি চরের আব্দুল মজিদ বলেন, নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বন্যা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। রাত থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পরিবার পরিজন নিয়ে মাচাংয়ের ওপর বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে নদীপাড়ের মানুষদের। এসব এলাকায় শিশু বৃদ্ধ আর গবাদি পশুপাখি নিয়ে চরম বিপদে রয়েছেন তারা। তবে শনিবার দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৯ টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে টানা ২৪ ঘণ্টা তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হয়। ফলে নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। তবে ২৪ ঘণ্টা পরে উজানের ঢেউ কমে আসায় পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটেছে।