লিয়াকত হাসান,নিজস্ব প্রতিবেদক:: ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রত্যাশা পূরণ না হাওয়ায় আন্দোলনের নতুন ছক তৈরি করেছে বিএনপি। ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের পরিকল্পনা ছিল দলটির। সেখান থেকে সরে এসে বিরতি দিয়ে কর্মসূচি পালনের নতুন ছক সাজিয়েছে দলটি। এর অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার মহানগরীর দুই অংশে পৃথক গণমিছিলের মাধ্যমে শক্তির জানান দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোও ঢাকায় পৃথক কর্মসূচি পালন করবে। দেওয়া হবে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা।
বিএনপি নেতারা জানান, গত ২৯ জুলাই অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, দায়িত্বে অবহেলা, কোন্দলের মতো বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আসে। এজন্য পরবর্তী কর্মসূচি সফলে কঠোর অবস্থান নেয দলের হাইকমান্ড। এর অংশ হিসেবে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে যুবদলের ঢাকা মহানগরের কমিটিও। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরীক্ষিত ত্যাগী নেতাদের। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলা করার অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ঢাকায় বড় মহাসমাবেশ করে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার পতন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। নানা নাটকীয়তার পর মহাসমাবেশ করতে পারলেও ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থানের কর্মসূচিতে প্রতাশা পূরণ হয়নি তাদের। সঙ্গত কারণে ধারাবাহিক কর্মসূচির পূর্বপরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন তারা। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিদিন নয়, বিরতি দিয়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে টানা ১২ দিন বিরতি দিয়ে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে মাঠে নামছে দলটি। রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’দিন মাঠে থাকার প্রাথমিক কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। এবার কোনো অবহেলা কিংবা দায়িত্বহীনতা
নয়; যে কোনো পরিস্থিতিতে মাঠে থেকেই কর্মসূচি সফল করতে নেতাদের ওপর কঠোর বার্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। নেতাকর্মীকে নতুন উদ্যমে চাঙা করতে নেওয়া হয়েছে এ কৌশল।
আন্দোলনের নতুন কৌশলের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো। বাদ জুমা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আলাদাভাবে গণমিছিল করবে। বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ার থেকে চৌধুরী পাড়া আবুল হোটেল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর এবং কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবে মহানগর দক্ষিণ।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উলস্নাহ আমান বলেন, ‘আমাদের গণমিছিল হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মহানগর উত্তরের সবগুলো ওয়ার্ড ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী অংশ নেবেন।’
দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘বাদ জুমা এই গণমিছিল শুরু হবে। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষ এই ফ্যাসিস্ট এই সরকারের পতন চায়।’
গণমিছিলের জন্য ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী বিএনপি মহানগর উত্তর বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ার থেকে চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেল, মহানগর দক্ষিণ কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে মালিবাগ রেলগেট, ১২ দলীয় জোট বিজয়নগর পানি ট্যাংকির সামনের সড়ক থেকে শান্তিনগর মোড়, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টনে আলরাজী কমপেস্নক্সের সামনে থেকে, এলডিপি কাওরান বাজারের এফডিসির কাছে এলডিপি অফিসের সামনে থেকে, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি আরামবাগে গণফোরাম চত্বর থেকে, গণ অধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে, গণ অধিকার পরিষদ (নূর) ফকিরাপুল কালবার্ট রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে, এনডিএম মালিবাগ মোড় থেকে, লেবার পার্টি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করবে। সবগুলো গণমিছিল বিকালে হলেও লেবার পার্টি ও সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট সকালে গণমিছিল করবে। গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য তাদের দলীয় কর্মসূচি থাকায় এই কর্মসূচি করছে না বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো যুগপৎভাবে এক দফার ঘোষণা দেয়। এই এক দফার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান। ‘এক দফা’র আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপি তার শরিক জোটগুলোকে একত্রিত করে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছিল। টানা ৬ মাসের বেশি সময় তারা যুগপৎভাবে পদযাত্রা, গণমিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি করেছে। ঢাকার এই গণমিছিল যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় কর্মসূচি। সর্বশেষ গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো অবস্থান কর্মসূচি হয়।
বিএনপি নেতারা জানান, কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত প্রস্তুতি সভা ও মতবিনিময় করা হচ্ছে। গত মঙ্গল ও বুধবার ধারাবাহিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে। এসব বৈঠকে শুধু গণমিছিল নয়; আগামীতে যে কোনো কর্মসূচিতে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দেওয়া হয়েছে কঠোর বার্তা। এখন থেকে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাদের বাধ্যতামূলক হাজিরার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে দলের কেন্দ্র থেকে। ফলে কোনো কারণ ছাড়া অনুপস্থিত থাকলেই পড়তে হবে সাংগঠনিক শাস্তির আওতায়। এমনটাই বলা হয়েছে মহানগরের প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের। একইভাবে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদেরও দেওয়া হয়েছে কড়া হুঁশিয়ারি। সামান্যতম গাফিলতিও সহ্য করা হবে না বলে স্পষ্ট করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। কর্মসূচি নিয়ে দলের এমন কঠোর অবস্থানের কারণে আগামীতে প্রতিটি কর্মসূচিতেই নেতাকর্মীর উপস্থিতি বাড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।