ডা. ইকবাল আহমেদ:: স্বাস্থ্যগত কারণে পুরুষের স্তন বড় হয়ে যাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘গাইনেকোমাস্টিয়া’। শারীরিক এই পরিবর্তন যেমন অস্বস্তিকর, অনেকের জন্য তেমনি আবার দুশ্চিন্তারও কারণ। বিশেষ করে এ সমস্যা পুরুষদের বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
গাইনেকোমাস্টিয়া হওয়ার কারণ:
১. অধিক ওজন বৃদ্ধি
২. হরমোনের অসামঞ্জস্য – পুরুষ দেহে মেয়েলি হরমোনের আধিক্য।
৩. বাচ্চার জন্মের পর মায়ের হরমোনের প্রভাবে নবজাতক বাচ্চার স্তন বড় হয়।
৪. ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষদের মাঝে প্রতি ৪ জনে ১ জনের হতে পারে, যেহেতু এই সময় এসে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে থাকে।
৫. বংশগত কারণে
৬. মাদকাসক্ত
৭. অপুষ্টিতে ভুগলেও হতে পারে
গাইনেকোমাস্টিয়ার উপসর্গ :
স্তন স্বাভাবিকের তুলনায় বড় বা ফোলা
স্তনে ব্যথা অনুভূত হওয়া
স্তনে চাকা চাকা কিছু একটা অনুভূত হওয়া
গাইনেকোমাস্টিয়ার চিকিৎসা :
পুরুষের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত স্তন কমিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় মেইল চেস্ট রিডাকশন সার্জারি। যারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত স্তন নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগছেন তারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।
সার্জারি ছাড়া অন্য চিকিৎসা :
যাদের স্তন অতিরিক্ত ওজনের জন্য বড় হয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রে ওজন কমালে সারা শরীরের ওজনের সঙ্গে ২০ থেকে ৩০ ভাগ পর্যন্ত স্তনের চর্বিও কমতে পারে। তাই আগে ওজন কমিয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যাদের হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণে হয় তাদের হরমোনের ওষুধ দিলেও ১০-২০ ভাগ পর্যন্ত কমতে পারে। তবে যাই হোক প্রথম থেকেই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা উচিত।
গাইনাকোম্যাস্টিয়া চিকিৎসা করা কতটা জরুরী?
একজন পুরুষ যখন গাইনাকোম্যাসিয়ায় ভোগের তখন তিনি এটা নিয়ে খুব হীনমন্যতায় থাকেন। নিজেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেন। কোন কাজেই মন দিতে পারেন না। সবসময় মানসিক অশান্তিতে থাকেন।
এজন পুরুষ যখন আমাদের কাছে আসেন তার ইতিহাস শুনি যদি মনে হয় এটা ক্ষতিকর কিছু না তখন তাকে এটা নিয়ে চিন্তিত না হতে বলি। কিন্তু এই সমস্যায় যিনি ভোগেন তিনি এটা থেকে মুক্তির উপায় খুজেন সবসময়। সাধারণত কসমেটিক কারণে এবং মানসিক প্রশান্তির জন্য এই সার্জারি করা হয়ে থাকে।
যারা গাইনাকোম্যাসিয়ায় ভোগছেন এটা যদি মানসিকভাবে আপনাকে পিড়া না দেয় তাহলে সার্জারি করার দরকার নেই। তবে সার্জারি ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই গাইনাকোম্যাস্টিয়া কমানোর জন্য।
সার্জারির পরের যত্ন:
১. ১০-১২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়া
২. অধিক তরল খাবার যেমন : স্যালাইন, শরবত, ফলের রস ইত্যাদি খাওয়া।
৩. ৮-১০ দিন বুকে বাইন্ডার বা প্রেশার গার্মেন্টস পরিধান করা।
৪. ৪/৫ সপ্তাহ ভারী কাজ বা ভারী ব্যায়াম পরিহার করা
৫. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা
লেখক : ডা ইকবাল আহমেদ, এমবিবিএস, বিসিএস, এফসিপিএস (প্লাস্টিক সার্জারি)
স্পেশালিস্ট প্লাস্টিক অ্যান্ড কসমেটিক সার্জন।