ঢাকাশুক্রবার , ৭ জুলাই ২০২৩
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

শোধ

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
জুলাই ৭, ২০২৩ ২:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

এম এ মাসুদ:: গ্রামের নাম মধুপুর। সেখানেই বাস করতেন বৃদ্ধ সোলেমান আলী। বয়স যখন চার কী পাঁচ, ঠিক তখনই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সোলেমানের বাবা। কিশোরী বয়সে স্বামী হারিয়ে পাগল প্রায় সোফিয়া শিশু সন্তান সোলেমানকে নিয়ে চলে আসেন ভাইয়ের বাড়ি মধুপুরে।

কিছুদিন যেতে না যেতেই একসময় সংসারের জন্য বোঝা মনে করে সোফিয়া ও তার সন্তান সোলেমানকে। অনাদর আর অবহেলা আঁচ করতে পেরে শিশুসন্তানকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন সোফিয়া। ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়ায় ভাইয়ের বাড়িতে আর ঠাঁই হলো না সোফিয়ার। পৈতৃকসম্পত্তি থাকলেও সেখান থেকে কিছুই না পেয়ে ভাইয়ের দেওয়া এক চিলতে মাটিতে একটি কুঁড়েঘর বাঁধেন তিনি। ওই সময়ে আমনে সোনা ফললেও আউশধান বিঘায় ফলত ২-৩ মন। তাই আমনে ভিক্ষা পেলেও আউশে মিলতো না তেমন। এ বাড়ি ও বাড়ি, এ গাঁও সে গাঁও ঘুরে বেলা শেষে যা পান তা দিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে কেটে যায় ওদের দিনকাল। ভাবে ছেলে বড় হয়ে উঠলে দুঃখ ঘুচবে একদিন।

ছেলেকে পড়াশোনা না করালে শুধু দিনমজুরি করে যে দুঃখ ঘুচবে না তা বুঝতে পারেননি সোফিয়া। এরই মধ্যে সোলেমান বেশ বড়সড় হয়ে উঠলে এবার ছেলেকে বিয়ে দেন তিনি। বছর কয়েক এর মধ্যেই দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা হন সোলেমান। দিনমজুরি করে স্ত্রী, সন্তান ও মাসহ ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে সংসার নামক ঘানি টানতে টানতে গলদঘর্ম হয়ে পড়েন। দেখেন চারিদিকে অন্ধকার।
এদিকে, বয়সের ব্যবধান খুব একটা না থাকায় প্রায় একই সাথে বড় হয়ে ওঠে দুই ছেলে, করে শ্রমিকের কাজ। এরই মধ্যে বিয়ে করে ফেলে বড় ছেলে সরওয়ার। বিয়ের ক’দিন পরেই আলাদা হয়ে যায় সে। আর অন্য ছেলে সোহাগ বিয়ে করে ঘর জামাই হিসেবে থেকে যায় শ্বশুর বাড়িতে। পাত্রস্থ করেন মেয়েকেও।
সুখ কী জিনিস তা যেন অধরাই রয়ে গেল সোলেমানের। মা সোফিয়ার মৃত্যুর পর সোলেমানের দিন কাটে স্ত্রীকে নিয়ে। বয়স হয়েছে তার। শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না বেশ ক’দিন ধরে। আগের মতো প্রতিদিন আর কাজেও ডাক পড়ে না বৃদ্ধ ভেবে। ছেলে সন্তান থাকার পরও কেউ খোঁজখবর না করায় বড্ড অসহায় বোধ করেন তিনি। ভাবেন, দুবেলা খাবার জোটানোই দায় আর ওষুধ!

এতোকিছুর পরও বড় ছেলে সরওয়ার বিভিন্ন গানবাড়িতে জুয়া খেলায় মত্ত হয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েন সোলেমান। ভাবেন, হাজারো হোক ছেলে তো। তাই তার মঙ্গলের কথা চিন্তা করে শাসন করতে যান তিনি। আর তাতেই বাঁধে বিপত্তি। ছেলে সরওয়ার হাত তোলে বাবার ওপর। খুবই ব্যথিত হন তিনি। খানিকক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন আসমানের দিকে। স্রষ্টার নিকট কিছু একটা বলছিলেন তিনি।

বছর কয়েক পর সরওয়ার সুন্দর একটা বাড়ি করেছিল বটে। কিন্তু সেই বাড়ির ছোট্ট একটি কক্ষেও ঠাঁই মেলেনি বৃদ্ধ বাবা-মার। সোলেমান ও তার স্ত্রী বেঁচে নেই এখন। বেঁচে রয়েছে ছেলে সরওয়ার। বয়স ষাট ছুঁইছুঁই।
গায়ে আর শক্তি নেই আগের মতো। শরীরে দানা বেঁধেছে অসুখ। একমাত্র ছেলে শফিকুল কথা শোনে না সরওয়ারের। বেপরোয়া আচরণ তার। কোনো কিছু বলতে গেলেই হাত তোলে বাবা সরওয়ারের ওপর! বাড়ির পাশে মোড়ের দোকানে গিয়ে অন্যদের নিকট পুত্রের হাত তোলার কথা জানায়। কথা বলতে বলতে গাল বেয়ে ঝরে পড়ে দুচোখের অশ্রু। একসময় উঠে বাড়ির পথ ধরে সে। আর উপস্থিত পড়শীরা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘দুনিয়ার ধার, দুনিয়ায় শোধ।’
//
লেখক: এম এ মাসুদ
কলাম লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

আপনার মন্তব্য লিখুন