তাহমিনা আক্তার,ঢাকা:: জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, দেশের বাজারে খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের এখন দম বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। দেশের মূল্যস্ফীতির পেছনে ভূ-অর্থনৈতিক প্রভাব যতটা না কাজ করছে, এর চেয়ে বেশি কাজ করছে অসাধু সিন্ডিকেটদের নৈরাজ্য। এই সিন্ডিকেট ও মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা করতে না পারলে সরকারের সব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার(৬ জুলাই) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব অধিবেশনে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় ব্যবহৃত কাঁচা মরিচ, আলু, ডিম তো আর ইউক্রেন বা রাশিয়া থেকে আসে না। তাহলে এগুলোর দাম বাড়ায় কে?’
রওশন এরশাদ বলেন, ‘সরকারের সুষ্ঠু নজরদারি আর দৃঢ় পদক্ষেপের অভাবে খুচরা ব্যবসায়ীরাও অযৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করছেন। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে প্রতিটি ভোগ্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।’
এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। ফলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা যদি সহজ না হয়, সাধ্য ও আয়ত্তের মধ্যে না আসে, তাহলে এসব উন্নয়ন অনেকের কাছেই অর্থহীন হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আইএমএফের ঋণ নেওয়ার পরে তাদের সংস্কারের শর্ত পূরণ একটা নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া এটি নির্বাচনের বছর।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ বাজেট বাস্তবায়নকালীন সময়েই।’
আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এটি যেন একটি ‘মডেল’ নির্বাচন হয়, তা কামনা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। এর বিপরীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাস যোগ্য নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সব দলকে নির্বাচনমুখী করাই হবে নির্বাচন কমিশনের মূল লক্ষ্য। এক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হন, এটাই এখন দেখার বিষয়।”
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, “দশকের পর দশক ধরে দেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা, সংঘাত ও প্রাণহানির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকুক, আমরা তা চাই না। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে একটি ‘মডেল নির্বাচনে’ পরিণত করবে, এটাই প্রত্যাশা করি।”
দেশে সাইবার অপরাধের পরিমাণ বাড়ছে উল্লেখ করে রওশন বলেন, ‘এ অপরাধে সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে নারী ও শিশু। এটি ব্যবহার করে আর্থিক প্রতারণাও বেড়েছে।’ পেনশনের জন্য ৬০ হাজার শিক্ষক অফিসে অফিসে ঘুরছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থ- সামাজিক উন্নয়নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐক্যমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’