স্টাফ রিপোর্টারঃ ২৮ দিন ধরে নিখোঁজ খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরের বণিকপাড়ার রহিমা খাতুন (৫৫)। গত ২৭শে আগস্ট রাতে পানি আনার কথা বলে বাসার নিচে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘণ্টা পার হলেও বাসায় না ফেরায় তার খোঁজে নিচে নামেন মেয়েরা। বাসার নিচে রহিমা খাতুনের ওড়না, স্যান্ডেল ও পানির কলস পড়ে ছিল। ওইদিনের পর থেকে মায়ের খোঁজে দিগ্বিদিক ছুটে চলছেন মেয়ে মরিয়ম মান্নান। ভাই-বোনদের সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। মাকে ফিরে পেতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। এরমধ্যে মরিয়ম জানতে পারেন ময়মসিংহের ফুলপুরে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত এক লাশের খবর। সেই লাশের সঙ্গে থাকা আলামতের কথা শুনে গতকাল ময়মনসিংহে ছুটে যান মরিয়ম।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার মায়ের লাশ পেয়েছি এইমাত্র।’ একইদিন রাত ১২টা ৪ মিনিটে আরেক ফেসবুক পোস্টে মরিয়ম মান্নান লিখেছেন, ‘আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি। আর কারও কাছে যাবো না।
কাউকে আর বলবো না আমার মা কোথায়। কাউকে বলবো না আমাকে একটু সহযোগিতা করুন। কাউকে বলবো না আমার মাকে একটু খুঁজে দেবেন। কাউকে আর বিরক্ত করবো না। আমি আমার মাকে পেয়ে গেছি।’ এরপর এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি মরিয়ম। তার মোবাইলে এসএমএস পাঠালেও উত্তর মেলেনি। লাশটি রহিমা খাতুনের কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা পুলিশ। গত ১০ই সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ফুলপুর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন মরিয়ম। এ সময় অজ্ঞাত ওই নারীর পোশাকের কয়েকটি ছবি মরিয়মকে পাঠান ওসি। ওই পোশাক দেখেই অজ্ঞাত নারীর লাশকে মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম। এ নিয়ে মরিয়ম ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘গত ১০ই সেপ্টেম্বর সকালে থানার বহরদার বাজার থেকে অজ্ঞাত এক নারীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ওই নারীর বয়স ৩০ কিংবা ৩২ হবে। দাবিদার না থাকায় দুদিন পর ১২ই সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে লাশটি দাফন করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
ডিএনএ টেস্ট করতে প্রয়োজনীয় আলামতও সংরক্ষণ করেছি আমরা।’ ওসি আরও বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে কল করেছেন মরিয়ম। তখন উদ্ধারকৃত নারীর পোশাক ও আলামত সম্পর্কে জানতে চান। পোশাক ও উদ্ধারকৃত আলামতের কথা শুনে নিজের মায়ের লাশ বলে দাবি করেন। এ অবস্থায় আমি তাকে বলেছি, শুক্রবার সকালে থানায় এসে উদ্ধারকৃত লাশের সঙ্গে পাওয়া আলামত ও পোশাকগুলো দেখে তারপরই যেন লাশ শনাক্ত করে। চূড়ান্তভাবে লাশ শনাক্তে আমরা মরিয়মের ডিএনএ টেস্ট করাতে পারি। তবে লাশ শনাক্তের আগে তার ফেসবুক পোস্ট দেয়া ঠিক হয়নি।’ গতকাল সকালে দুইবোনকে সঙ্গে নিয়ে ফুলপুর থানায় যান মরিয়ম। সেখানে পুলিশের উদ্ধার হওয়া লাশের বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। লাশটি তার মায়ের কিনা তা নিশ্চিত হতে লিখিতভাবে পুলিশের কাছে আবেদন দিয়েছেন তিনি। পিবিআইয়ের খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘গত ১০ই সেপ্টেম্বর ফুলপুর থানা এলাকা থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার হয়।
ওই থানার ওসি আমাদের জানিয়েছেন, বয়স ৩২ উল্লেখ করে ওই নারীর লাশ দাফন করা হয়েছে। তবে তার ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। আমরা নিশ্চিত নই যে, ফুলপুরে যে নারীর লাশ পাওয়া গেছে তা মরিয়মের মায়ের। কারণ মরিয়মের মা রহিমা খাতুনের বয়স ৫৫ বছর। যদি তার মেয়ে পোশাক দেখে লাশ শনাক্ত করেও থাকেন এরপরও ডিএনএ টেস্ট করে প্রকৃতভাবে লাশ শনাক্ত করতে হবে। কারণ মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।’ এর আগে গত ২৭শে আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নামেন রহিমা খাতুন। পরে মায়ের খোঁজে সন্তানরা নিচে নেমে ব্যবহৃত স্যান্ডেল, ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজেও না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৪ই সেপ্টেম্বর মামলাটি পিবিআইতে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এরপর প্রক্রিয়া মেনে ১৭ই সেপ্টেম্বর নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। এখন এই মামলা তদন্ত করছেন পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান।
মায়ের সন্ধানের দাবিতে গত ১০ই সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন রহিমা খাতুনের মেয়ে মরিয়ম। ওই সময় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি-জমা ও সম্পত্তির ঝামেলার কারণে তার মাকে গুম করা হতে পারে। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘এ পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতে বিষয়টি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।’ দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, রহিমা খাতুন নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী হেলাল হাওলাদারসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব। তারা হলেন-খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া, রহিমা খাতুনের দ্বিতীয় স্বামী হেলাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফ।