শীতের সবজিতে কাচাবাজারে স্বস্তি এলেও বেড়েছে চালের দাম, একইসঙ্গে বেড়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা ভোজ্যতেলের দামও।
শুক্রবার ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে। মাছ, মাংসসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আগের মতোই। তবে সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে সরু চালের দাম খুচরায় ৫০ কেজির বস্তায় সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা অর্থাৎ কেজিতে ৮ টাকা বেড়েছে। পুরনো স্বর্ণা, পাইজাম ও বিআর আটাশ চালের দামও কেজিতে ১-২ টাকা করে বেড়েছে।
আর সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১০ টাকার মতো করে বেড়েছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাজারে এখন সরু চাল ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ, মাঝারি চাল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ এবং মোটা চাল ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এক লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ, ৫ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ।
গত এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে রশিদ ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম কয়েক দফায় বস্তায় প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে বলে মিরপুরের পীরেরবাগের খুচরা দোকান মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রেতা ফেরদৌস মনোয়ার জানিয়েছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চালের দাম কখনও এতটা বাড়েনি। রশিদের মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা এখন ৩১০০ টাকা, ডলফিন, সাহারা, সালাম ব্র্যান্ডের বস্তার দাম ৩০০০ টাকা। পাইজাম এখন ২৪৫০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন ধানের বিআর আটাশ চালের দাম ২৪৫০ টাকা। সাধারণত পাইজামের দাম আটাশ চালের চেয়ে ১৫০ টাকা কম থাকে।”
আগারগাঁওয়ের চাল ব্যবসায়ী রহমত উল্লাহ জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ৫০-১০০ টাকা করে পুরনো চালের দাম বাড়ছে। তীর ব্র্যান্ডের মিনিকেট প্রতি বস্তা এখন ২৯০০ টাকা। এছাড়া নতুন আমন ধানের গুটি স্বর্ণা, পাইজাম, বিআর আটাশ চাল বাজারে রয়েছে। পাইকারিতে এসব চালের দাম প্রতি বস্তা ২৩৫০ টাকা।
চালের দাম বাড়ছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পুরনো ধানের মিনিকেটসহ অন্যান্য চালের দাম বেড়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।”
মিরপুর-১ নম্বর বাজারে চালের পাইকার হাজী মহিউদ্দিন বলেন, “মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম অনেক বেড়ে গেছে, যা গত ৩-৪ বছরের মধ্য সর্বোচ্চ। মিনিকেট ২৯৫০ আর নাজির ২৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমন মওসুমের নতুন ধান থেকে আসা মোটা চালের দাম কিছুটা কমেছে।
“পাইজাম যেটা ২৩৫০ টাকা ছিল সেটা এখন ২২০০ টাকায় নেমেছে। মূল বিষয়টি হচ্ছে মোটা চালের দাম কমেছে আর গত মওসুমের চালের দাম বেড়েছে।”
দীর্ঘদিন দাম পড়তির দিকে থাকা সুগন্ধি চালের দামও সম্প্রতি বাড়া শুরু করেছে। কেজিতে গড়ে ৫ টাকা করে বেড়ে প্রকারভেদে ৭৩ টাকা থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সুগন্ধি চাল।
চলতি আমন মওসুমে সরকার ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল ও ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সরকার। তবে এই দামে চাল দিলে লাভের পরিবর্তে উল্টো লোকসান হবে জানিয়ে চাল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মিল মালিকরা। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ভারতের বাজার থেকে প্রতি কেজি ৩৪ টাকা ৩৫ পয়সা দরে এক লাখ টন চাল আমদানি শুরু করছে সরকার।
তেলের দামও বাড়ার কথা জানিয়ে মিরপুরের বড়বাগ কাচাবাজারের মুদি দোকানি শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক লিটার সয়াবিন তেলের গায়ের দাম দেওয়া আছে ১২৫ টাকা, এর কোনোটা ১১০ টাকা এবং কোনোটা এক ১১৫ টাকায় কিনতে পারছি। বিক্রি করছি গায়ের লেখা খুচরা মূল্য অনুযায়ী।
“রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতল কেনা পড়ছে ৫৬৭ টাকা, বিক্রি ৬৩০ টাকায়। এক মাস আগে এই বোতল কিনতে লাগত ৪৫৫ টাকা। তীর ও বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের তেল কেনা পড়ছে ৫৫০ টাকা থেকে ৫৫৫ টাকা, বিক্রি করছি ৬২৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজির ক্রয়মূল্য ১০৮ টাকা, বিক্রি ১১৫ টাকা। ১০ দিনের ব্যবধানে এই তেলের দাম বেড়েছে ১০ টাকা।”
পীরেরবাগ এলাকায় কিছু মুদি দোকানে এখনও প্রতি লিটার ১১৫ টাকা এমআরপির বসুন্ধরা ও তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের বোতল পাওয়া যাচ্ছে। বোতলজাত তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে পরিবেশকরা আভাস দিয়েছেন বলে মুদি দোকানি পলাশ জানিয়েছেন।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দেশে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে দেশের বাজারে দাম বাড়াতে হচ্ছে বলে মিল মালিকরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি তেলের দাম প্রতি মণে ১০০ টাকা করে কমলেও গতকাল আবার ২০ টাকা করে বেড়ে গেছে।
এই তেল ব্যবসায়ীর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার পাইকারি বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৯৩ টাকা ১৭ পয়সা।
খুচরায় দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পাইকারি বাজার থেকে খুচরায় দামের পার্থক্য হওয়া উচিত সর্বোচ্চ ১০ টাকা। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক সময় তা অনেক হেরফের হয়ে যায়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে হয়ত দাম বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সরকার চাইলে অন্তত দাম ঠিক করে দিয়ে এসআরও প্রকাশ করতে পারে।”
বাজারে ভরপুর শীতের শাক-সবজি আসায় গত দুই সপ্তাহ ধরে এসব খাদ্যপণ্যের দাম কমের দিকে। লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, সরিষা শাক, লাউ শাকের আঁটি কেনা যাচ্ছে প্রতিটি ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায়। ১৫ দিন আগেও এসব শাকের আঁটি বিক্রি হত ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
শীতের সবজি মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম, লাউ, গাজর, বরবটির দামও কমে এসেছে। প্রতিটি ১৫ টাকায় মিলছে ফুলকপি-বাঁধাকপি। মানভেদে মুলা পাওয়া যাচ্ছে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকায়, যা কিছু দিন আগেও বিক্রি হচ্ছিল ৩০ টাকায়। প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে শিম, বরবটি। মাঝারি আকারের হৃষ্টপুষ্ট লাউ পাওয়া যাচ্ছে ৪০ টাকায়।