রাশেদুল ইসলাম রাশেদ,স্টাফ রিপোর্টারঃ রমজান শুরুর মাসখানেক আগে থেকেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম হুহু করে বেড়ে যায় গত কয়েক বছর ধরে। এ বছরও রমজান সামনে রেখে বাজারে চাল, আটা, তেল চিনিসহ বেড়েছে পণ্যের দাম। ভর মৌসুমেও সবজির দাম নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। বাম্পার ফলন, পর্যাপ্ত আমদানি এবং নানা কর্মসূচির পরও চালের বাজার অস্থির। অভিযোগ রয়েছে, অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটেই বাজারে পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
লাগামহীন দাম বৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষেরা। তাদের বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। যেন সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে বোবা কান্না।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামের চিত্র। এর প্রভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জনজীবন।
বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা, ছাগলের (খাসি) মাংস ৭৫০, মুরগি ১৫০-৩০০ টাকা, মোটা চাল ৪৫ টাকা, চিকন চাল ৫০-৮০ টাকা, ইলিশ মাছ ৬০০-৯০০ টাকা, সিংমাছ ৪০০ টাকা, অন্যান্য মাছ ৩০০ টাকা (গড়ে), সোয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা, সরিষা তেল ১৯০ টাকা, বিভিন্ন ডাল ১০০-১৪০ টাকা, চিনি ৮০ টাকা, শাক-সবজি (প্রকার ভেদে) ২৫-৮০ টাকা, প্রতি পিস ডিম ৯-১৪ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য মসলাসহ নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে আকাশচুম্বি। এসব দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, উত্তর জনপদের জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ একসময় এ জেলাটি মঙ্গাপীড়িত হিসেবে পরিচিত ছিল। এই মঙ্গা দূরীকরণে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সেই মঙ্গা নামটি ঘুচিয়ে স্বচ্ছলতা ফিরেছে সকল পেশা-শেণির মানুষের। এরই মধ্যে করোনার ধাক্কা আর দফায় দফায় ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দামে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে ফের শুরু হয়েছে নিরব দুর্ভিক্ষ।
এদিকে, বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের দফায় দফায় লকডাউন আর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কারনে কর্মহীন হয়ে পড়ে শ্রমজীবী মানুষেরা। সেই সঙ্গে নদীবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জে বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ যেন নিত্যসঙ্গী। এরপ্রভাবে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। ইতোমধ্যে হুহু করে বেড়ে চলেছে ভোগ্যপণ্য কিংবা নিত্যপণ্য ও বিভিন্ন জিনিসিপত্রের দাম। এমন দামের কারনে একেবারই বেসামাল সাধারণ মানুষেরা। দিনদিন তাদের ব্যয় বাড়লেও, বাড়ছে না আয়-রোজগার। ফলে সংসার চলাতে হাঁসফাঁস উঠেছে তাদের।
এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে প্রচণ্ড আঘাত হানতে শুরু করেছে। অধিক দামে পণ্যসামগ্রী কেনা ভুক্তভোগীদের বোবা কান্না যেনো দেখার কেউ নেই। অস্থির এই বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের সঠিক তদারকি না থাকলে সাধারণ মানুষ আরও বেকায়দায় পড়তে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
হাফিজার নামের একজন স্বল্প আয়ের ব্যক্তি প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে জানান, যেভাবে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে তুলনায় আয় বাড়েনি তার। এতে করে পরিবারের চাহিদা পূরণে বাড়ছে ঋণের বোঝা।
তিনি আরও বলেন, আগে একাধিক তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়া হতো। এখন খাদ্যপণ্যের দাম বেশি হওয়ায় খাবারের আইটেম কমানো হয়েছে।
উপজেলার বামনডাঙ্গার মেসার্স বকসা স্টোরে কর্মরত মিলন চন্দ্র প্রতিদিনের বাংলাদেশ’কে জানান, গত কিছুদিনের ব্যবধানে চাল-ডাল-তেল-মসলাসহ সব ধরনের জিনিপত্রের দাম বেড়েছে। এতে করে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে ক্ষুব্ধতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকি অব্যাহত রেখেছেন তারা। যারা কৃত্রিম সংকট বা অতিরিক্ত দামে খাদ্যপণ্য বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ-আল-মারুফ মুঠোফোনে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার লক্ষ্যে সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলতে কিছু থাকার সুযোগ নেই এ উপজেলায় বলে জানান তিনি।
রাশেদুল ইসলাম রাশেদ/প্রতিদিনের বিডি