মোঃ মামুনুর রশিদ (মিঠু), লালমনিরহাটঃঅবশেষে জলিল হত্যার জট খুলেছে। তাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে পরকীয়া প্রেমিক রব্বানী ও প্রেমিকা মৃত আব্দুর জলিলের স্ত্রী মমিনা বেগম।
ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) রাতে তাদের আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে বুধবার (২৮জুলাই) বিকালে আসামীদের কোর্টে পাঠায় পুলিশ। আসামীর স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছন লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ- সার্কের) মারুফা জামান।
গত ২২ জুলাই রাতে লালমনিরহাট পৌসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মাঝাপাড়া এলাকার কাচামাল ব্যবসায়ি আব্দুর জলিলের মৃত্য হয়। পরদিন সকালে জলিলের স্ত্রী মমিনা বেগম প্রতিবেশিদের বলেন, তার স্বামী স্ট্রোক করে মারা গেছেন। পরে মমিনা বেগমের বাবার বাড়ির লোকজন পুলিশকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে নামাজের জানাজা শেষে লাশ দাফন করেন। গত ২৪ জুলাই বিকালে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে বাড়িতে মিলাদ মাহফিলও করা হয়। ওই মিলাদ মাহফিলে মরহুমের স্ত্রী ও মরহুমের বড় ভাই আব্দুর রশিদের সাথে কথা কাটা কাটি হয়।
সন্দেহ হলে মরহুমের বড় ভাই আব্দুর রশিদ গত ২৫জুলাই লালমনিরহাট পুলিশ সুপার ও সদর থানা বরাবর লেখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের সূত্রে ধরে লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ- সার্কের) মারুফা জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনা স্থানে যান এবং কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন। গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করে সবাইকে ছেড়েও দেওয়া হয়। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে মৃত জলিলের স্ত্রী মমিনা বেগম ও পরকীয়া প্রেমিক স্থানীয় ওষুধ দোকানদার রব্বানীসহ আরো দুজনকে লালমনিরহাট ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে সেখানে মমিনা ও রব্বানী জলিলকে হত্যার বিষয় স্বীকার করে। তাদের দু’জনের মধ্যে পরকীয়া সম্পর্ক থাকার কারনে ওই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে জানায়। পরে রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ- সার্কের) মারুফা জামান মমিনাকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে এসে হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন।
এ হত্যা কান্ডে দুইজন জড়িত থাকায় মমিনা আর রব্বানীরকে আটক করে বাকি দুজকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাট সদরের খুনিয়াগাছ এলাকার শাহার আলীর ছেলে আব্দুল জলিল প্রায় ৮ বছর আগে সাপটানা মাঝাপাড়া এলাকায় স্ত্রীসহ বসবাস করে আসছেন। এদিকে ঢঢ গাছ এলাকায় রমজান আলীর ছেলে তিনদীঘি বাজারের ওষুধ দোকানী গোলাম রাব্বানীর সাথে মমিনার পরকীয়া প্রেমে গড়ে উঠে।
মরহুমের বড় ভাই আব্দুর রশিদ ও ছোট ভাই দুলু জানায়, দুজন মিলে আমাদের ভাইকে হত্যা করে। অথচ স্ট্রোক করে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে নাটক সাজায় ভাবী মমিনা বেগম। আমরা পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই যে, আমাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত তদন্ত করে আসামী গ্রেফতার করেছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ- সার্কের) মারুফা জামান বলেন, অভিযোগের আলোকে বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করে মমিনা বেগম ও রব্বানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসা হয়। তারা যে পরিকল্পিত ভাবে এই হত্যা করেছে সেই তথ্য পাওয়া গেছে। তারা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।