নিজস্ব প্রতিবেদক | ভুয়া সনদ ও জাল সিলের মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে সুকৌশলে চাকরি দিয়ে ও চাকরি দেয়ার কথা বলে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এক প্রতারক চক্রের মূল হোতাকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৪। আটক প্রতারকের নাম আব্দুল মালেক (৪২)।
র্যাব বলছে, চাকরি প্রত্যাশীদের পাস করানোর ক্ষেত্রে নকল বিভিন্ন সনদ ও সার্টিফিকেট ব্যবহার করতেন আবুল মালেক। চাকরি পাওয়ার পর কোনো চাকরিপ্রত্যাশী যদি তাকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দিতেন তাহলে তিনি জমাকৃত জমির দলিলের মাধ্যমে প্রার্থীর জমি দখল করতেন। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা না করেও অর্থ আত্মসাৎ করতেন মালেক।
সোমবার (১৯ জুলাই) কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
এর আগে রোববার (১৯ জুলাই) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মনিপুরীপাড়া থেকে র্যাব-৪ এর একটি দল তাকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জাল কাগজপত্র ও সিল জব্দ করা হয়।
চক্রের বাকি পলাতক তিন সদস্য হলেন- আব্দুর রাজ্জাক (৫০), আল-আমিন (২৫) ও অবিনাষ (৩২)।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আটক আব্দুল মালেক ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সে ১৯৯৩ সালে দাখিল এবং ১৯৯৫ সালে আলিম পাশের পর স্থানীয় একটি কলেজ থেকে বি.কম এবং এম.কম ডিগ্রি লাভ করে। শিক্ষাজীবন শেষ করে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি পায়। চাকরি পাওয়ার পর থেকে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১০ সালে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে তাকে ২০১৫ সালে চাকরিচ্যুত করে।’
যেই কৌশলে প্রতারণা করেন আব্দুল মালেক
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রথমে নিজ এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এজেন্ট নিয়োগ করে চাকরিপ্রার্থীদের সংগ্রহের কাজ শুরু করে আব্দুল মালেক। পরে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সে চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য একটি কোচিং সেন্টার চালু করে ২০১৬ সালে।’
তিনি বলেন, ‘কোচিং চলাকালে চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন কোটার অন্তর্ভুক্ত তাদের আলাদা করে সে। পরে নগদ অর্থ অথবা জমির দলিল জমা রাখার শর্তে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় আবুল মালেক। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় যে, চাকরিপ্রত্যাশীদের সে তদবির করে চাকরি নিয়ে দেবে আর এর জন্য তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে। আবুল মালেক চুক্তির মাধ্যমে ঠিক করা টাকা থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নেয়। পরে চুক্তি শেষে বিভিন্ন মাধ্যম যেমন- লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর ছবি পরিবর্তন, প্রশ্ন ফাঁস, প্রার্থীকে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাস করানো হয়।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চাকরিপ্রত্যাশীদের পাস করানোর ক্ষেত্রে নকল বিভিন্ন সনদ ও সার্টিফিকেট ব্যবহার করতো আবুল মালেক। চাকরি পাওয়ার পর কোনো চাকরিপ্রত্যাশী যদি তাকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা না দিতো তাহলে সে জমাকৃত জমির দলিলের মাধ্যমে প্রার্থীর জমি দখল করতো। আবার অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাকরির ব্যবস্থা না করেও অর্থ আত্মসাৎ করত মালেক।’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া যারা এই প্রক্রিয়ায় চাকরি পেত তাদেরকে জিম্মি করার উদ্দেশ্যে তাদের সব ধরনের কাগজপত্র জমা রাখতো সে। যাতে পরবর্তীতে তাদের কেউ ঝামেলা করলেই তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ দিতে পারে।’
প্রতারণা মাধ্যমে আবদুল মালের আত্মসাৎ করা অর্থের বিবরণ দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকে আব্দুল মালেকের একাধিক অ্যাকাউন্টে ৫০ লাখেরও বেশি টাকার এফডিআর রয়েছে। ঢাকা জেলার ধামরাই থানার ফোর্ডনগর এলাকায় ৮.২৫ শতাংশ জমি রয়েছে তারা। অন্যদিকে, রাজধানীর মনীপুর এবং ৬০ ফিট এলাকায় তার তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা। নিজ জেলা কুষ্টিয়া সদর থানার বড়িয়া এলাকায় জাহান সুপার মার্কেট ছাড়াও নিজ গ্রামে ২৫ বিঘা জমি এবং একটি পাকা বাড়ি রয়েছে। কুষ্টিয়ায় তার জাহান গ্রুপ নামে একটি কনজ্যুমার প্রোডাক্ট কারখানা রয়েছে। এছাড়া তার কুষ্টিয়া এক্সপ্রেস নামে একটি বাস ও চারটি ট্রাকও রয়েছে।’
আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।