ঢাকামঙ্গলবার , ৬ এপ্রিল ২০২১
  1. অপরাধ ও আদালত
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইসলাম ডেস্ক
  5. কৃষি ও অর্থনীতি
  6. খেলাধুলা
  7. জাতীয়
  8. তথ্য-প্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. নির্বাচন
  11. বানিজ্য
  12. বিনোদন
  13. ভিডিও গ্যালারী
  14. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
  15. রাজনীতি

বাস্তব জীবনযুদ্ধে লালমনিরহাটের রাশেদা: এখন গার্মেন্টস মালিক হওয়ার স্বপ্ন!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
এপ্রিল ৬, ২০২১ ২:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। সারা বিশ্বে যখন মরণঘাতী করোনা ভাইরাসে আতঙ্কে আতঙ্কিত, সেই তুলুনায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। এই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর মিছিলে দাড়িয়েছে, ঠিক তখনি এই মহামারি করোনা ভাইরাসেই যেন আশির্বাদ হয়ে এলো রাশেদার জীবনে। যখন সারা দেশে মাস্ক সংকট ঠিক ঐ সময় রাশেদা মাত্র একটি ভাঙ্গা সেলাই মেশিন দিয়ে মাস্ক তৈরি করে শহরে বিভিন্ন দোকান ও প্রতিষ্ঠানে নাম মাত্র দামে বিক্রি করা শুরু করেন। তিনি এখন শহরে মাস্ক রাশেদা নামে পরিচিত। তিনি আগে দুই সন্তানের লেখা পড়া ও সংসারের খরচ চালাতে হিমসিম খেতো, সেই রাশেদা এখন মাস্ক বিক্রি করে তার পরিবারে সচ্ছলতা এনেছে। শুধু তাই নয় তার অধিনেই এখন ৮/১০ জন মহিলা প্রতিনিয়ত কাজ করে তাদের সংসার চালাচ্ছে ।

রাশেদা বেগম-লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার ফারুক হোসেনের স্ত্রী। অভাবের সংসার আর দুই সন্তানের পড়া-শোনার খরচ চালাচ্ছিলেন একটি ভাঙা সেলাই মেশিনের সাহায্যে। সেই রাশেদা শুধু মাস্ক বিক্রি করেই সংসারের সচ্চলতা-সহ লাখপতি হয়েছেন। তিনি ভবিষ্যতে গার্মেন্টসের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

জীবনের পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না রাশেদা বেগমের। বাবার ছিল অভাবের সংসার। এ কারণে স্কুলের গণ্ডি না পেরুতেই চলে আসেন স্বামীর সংসারে। সেখানেও অভাব। এরমধ্যেই তাদের ঘরে আসে দুই ছেলে। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে একটু ভালো থাকার আশায় ২০১৬ সালে বাবা-মায়ের জমি বিক্রি করে ঋণ নিয়ে স্বামী ফারুক হোসেনকে বিদেশে পাঠান । স্বামী বিদেশে গিয়ে ভুলে যান রাশেদা-কে। খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দেন রাশেদা ও তার সন্তানদের । সেই থেকে নেমে আসে রাশেদার জীবনে অন্ধকার। সংসারের বোঝা বইতে না পেরে দুই ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমান বাবার বাড়িতে। এরপর নিজের ও সন্তানদের খরচ চালাতে রোজগারের কথা চিন্তা করেন রাশেদা। তখনই হানা দেয় দেশে করোনা ভাইরাস।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যখন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে তখনই মাস্ক তৈরির পরিকল্পনা করেন রাশেদা বেগম। সেলাইয়ের কাজ জানা ছিল তার। এ কারণে একটা সেলাই মেশিন জোগাড় করে নেমে পড়েন বাস্তব জীবনযুদ্ধে। শুরু হয় তার মাস্ক তৈরি ও বিক্রি।

এ ব্যাপারে রাশেদা বেগম বলেন, মাস্ক তৈরির আগে নকশা তুলতাম খাতার কাগজ বা পুরান কাপড় কেটে। প্রথমদিন বাজার থেকে ৬০ টাকা দরে দুই গজ মোটা সুতি কাপড় কিনে ২০টা মাস্ক বানাই। সেগুলো রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি ৩০ টাকা করে। ওইদিনই আয় হয় ছয়শ টাকা। সেই টাকায় পরদিন সকালে আরো ১০ গজ কাপড় কিনে মাস্ক বানাই। তা বিক্রি করে আসে তিন হাজার টাকা। এভাবেই মাস্ক বানানো ও বিক্রি বাড়তে থাকে। তিনি আরো বলেন, কিছুদিন পর দেড় হাজার টাকায় নতুন একটি সেলাই মেশিন কিনে বেশি বেশি মাস্ক তৈরি করি। পাশাপাশি শহরের অলি-গলি, রাস্তা, হাট-বাজারে বিক্রি করতে থাকি। এভাবেই আমার মাস্ক বিক্রির খবর জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সে খবর চলে যায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে। জনগণের মাঝে বিতরণের জন্য প্রশাসন থেকে দুই হাজার মাস্ক বানানোর অর্ডার পাই। এজন্য অগ্রিম চার হাজার টাকাও দেয়া হয় আমাকে। সেই টাকায় কয়েক থান কাপড় কিনে শুরু করি মাস্ক বানানোর কাজ।

শুধু জেলা প্রশাসন না, পাঁচটি উপজেলার প্রশাসন অফিস, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান-সহ অনেক জায়গা থেকে মাস্কের অর্ডার পেতে শুরু করেন রাশেদা বেগম। অল্পদিনেই কয়েকটি মেশিন কিনে ফেলেন। রাশেদার এই কাজকে তরান্বিত করার জন্য একটি সেলাই মেশিন উপহার হিসাবে
সহযোগিতা করেন লালমনিরহাট পৌরসভার- ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশেদুল হাসান রাশেদ।
এভাবে অল্প সময়ে বিভিন্ন ডিজাইনের মাস্ক তৈরি করে মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেন রাশেদা বেগম।

মাস্ক তৈরি ও বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন জনকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতামূলক পরামর্শও দেন তিনি।
রাশেদা বেগম আরো বলেন, আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। সংসার, দুই ছেলের পড়াশোনার পাশাপাশি মা-বাবার খরচ বহন করাও সহজ হয়ে গেছে। আরো কিছু টাকা হলে একটি কারখানা স্থাপন করব। সেখানে উন্নত মানের মাস্ক তৈরি করে সেগুলো বিদেশেও রফতানি করতে পারব। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কর্মকর্তা ফিরোজুর ইসলাম ফিরোজ বলেন, রাশেদা বেগম আমার কাছে এসে তার কষ্টের কথা বলে। তখন আমি তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিতে বলি। এখন তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে লালমনিরহাটের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, রাশেদা বেগম এক বছর শুধু মাস্ক বিক্রি করেছেন। আজ তিনি স্বাবলম্বী। তার তৈরি মাস্ক মানসম্মত। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন রাশেদার তৈরি মাস্ক জনগণের মাঝে বিতরণ করেছে। আগামীতে তার কাছ থেকে আরো মাস্ক নেয়া হবে।