ঢাকামঙ্গলবার , ২৩ মার্চ ২০২১
  1. Covid-19
  2. অপরাধ ও আদালত
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ডেস্ক
  6. কৃষি ও অর্থনীতি
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয়
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. দেশজুড়ে
  11. নির্বাচন
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. ভিডিও গ্যালারী
  15. মুক্ত মতামত ও বিবিধ কথা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পারিবারিক ব্যবসায় হাল ধরে লাখপতি শারমিন!

প্রতিবেদক
প্রতিদিনের বাংলাদেশ
মার্চ ২৩, ২০২১ ১০:৫৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শারমিন ইসলাম নিপা, জন্ম কুমিল্লায়। এসএসসি পরীক্ষার পর বাবার চাকরির সুবাদে পুরো পরিবার চলে আসেন ঢাকায়। ঢাকার শহীদ বীর উত্তম লেঃ আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন শারমিন। বাংলাদেশ ইন্ডিপিন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ এবং এমবিএ শেষ করেন। অধ্যায়ণরত অবস্থায় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ে হয়ে যায় শারমিনের। বিয়ের পর গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে শারমিন। এমবিএ শেষ হয় ২০২০ সালে।

শারমিন বলেন, ‘মূলত আমার পড়াশোনা শেষে যখন আমি চাকরির চেষ্টা করছিলাম তখনই দেশে করোনার কারণে লকডাউন শুরু হয়ে যায়। তারপর ঘরে বসে কিছু করার চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মাথায় আসলো অনলাইন বিজনেস এর কথা। ছোটবেলা থেকেই আমি ডিটারমাইন্ড ছিলাম। আমি ঘরে বসে থাকবো না অবশ্যই নিজের একটা আলাদা আইডেন্টিন্টি তৈরী করবো। যদিও আমার চাকরি করার ইচ্ছে ছিল কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কিন্তু বিয়ে হয়েছে ব্যাবসায়ী পরিবারে। সেই থেকে আমার স্বামীর অনুপ্রেরণায় ব্যাবসায়ী জীবনে পা দেওয়া। আমার শশুরবাড়ী সিরাজগঞ্জ, সবাই তাঁত ব্যাবসার সাথে জড়িত। বিয়ের পর আমি প্রথম তাঁতের মেশিনের আওয়াজ শুনি। এর আগে তাঁত নিয়ে কোন ধারনা ছিল না আমার। আমাদের তৈরী শাড়ী, লুংগী পুরো বাংলাদেশে সাপ্লাই হয়। তখন আমার মাথায় আসলো আমাদের শাড়ী নিয়ে সবাই বিজনেস করছে। আমি তাহলে কেনো বসে আছি, এতো সুন্দর সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি না। সিরাজগঞ্জের খুকনী এলাকায় আমার শশুরবাড়ী। দিন রাত ২৪ ঘন্টা তাঁতের খট খট আওয়াজ শুনতে শুনতে আমি তাঁত নিয়ে কাজ করার সপ্ন বুনতে থাকি। আমাদের ফ্যামিলি সব বিজনেস হোলসেল রিলেটেড, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের সব শোরুম হোলসেল বেসিক। আমি মূলত রিটেইল দিয়ে শুরু করেছিলাম কিন্তু এখন আমার থেকে শাড়ী নিয়ে অনেক আপুরাই বিজনেস করছে। আমি সবাইকে সোর্স হিসেবে সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছি। শাড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত শিখছি আমি আমার শশুর এর কাছ থেকে। শাড়ী বুনন, কাউন্ট, ম্যাটেরিয়াল সব কিছু উনি আমাকে বুঝিয়ে দেয়। উনি আমাকে অনেক সাপোর্ট করে সব দিক থেকে। উনি সিরাজগঞ্জের নামকরা সনামধন্য একজন ব্যাবসায়ী। কখোনো আমার কাজকে ছোট করে দেখেনি। আর যার কথা না বললেই না তিনি আমার স্বামী। সে ছায়ার মতো আমার পাশে ছিলো। সে পাশে না থাকলে ব্যাবসায়ী হওয়ার সপ্ন দেখার সাহস আমি পেতাম না’।

শারমিন আরও বলেন, ‘আমার শুরুটা ফেইসবুক গ্রুপ উই (উইমেন্স এন্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকে। উই এর সব আপুদের গল্প পড়ে নিজের মধ্যে আলাদা রকম কনফিডেন্স পেলাম। উইতে পোস্ট করার দ্বিতীয় দিনেই আমি প্রথম অর্ডার পাই। সেই থেকে কোনদিন আমার আর অর্ডার থেমে থাকে নি। উই থেকে, পেইজ থেকে প্রতিদিন অর্ডার আসতে থাকে। শুধুমাত্র উতে আমার মোট বিক্রিকৃত পণ্যের অর্থমুল্য মাত্র ৬ মাসে ৬ লক্ষ টাকা আর পেইজ থেকে ২ লক্ষ টাকা। একদম শূন্য পুঁজিতে আমার বিজনেস শুরু। আমি আমাদের দোকানের কিছু শাড়ীর ছবি তুলে পোস্ট করা শুরু করি সেখান থেকেই অর্ডার আসতো। এবং ওখান থেকেই ডেলিভারি দিতাম। কোন স্টক করতাম না। কিন্তু এখন আমার কিছু পারমানেন্ট কাস্টমার আছে যার জন্য আমাকে আলাদা স্টক মেইন্টেইন করতে হয়। কারণ আমার থেকে শাড়ী নিয়েই অনেকেই বিজনেস করছে। তাদের সব সময় সাপ্লাই দেওয়া লাগে’।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন , ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার আমার পেইজ ‘শাড়িওয়ালাকে তাঁত পণ্যের প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা। আর একটা শো-রুম চালু করা। যেখান থেকে সবাই ইচ্ছে মতো দেখে শাড়ী নিয়ে যেতে পারবে। আমার পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও গিয়েছে বেশ কয়েকবার। আর এখন আমি নিজেই DHL এ প্রোডাক্ট পাঠাচ্ছি কানাডায়। চ্যালেঞ্জ এর কথা বলতে গেলে তেমন কিছুই ফেইস করতে হয়নি। যেহেতু আমার পরিবার আমার শক্তি আমাকে সব সময় সাহস জুগিয়েছে। কিন্তু একটা জিনিস খুব ফেইস করেছি। অনেকেই বলতো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে এতো টাকা খরচ করে পরে শাড়ী বেচে। যদিও এগুলা কথা আমি পাত্তা দেই নি। হাস্যকর ব্যাপার হলো এরাই আমার কাছে এডভাইজ নিতে আছে অনলাইন বিজনেস শুরু করবে তাই। আমাদের সমাজে একটা ট্যাবু এখনো আছে, অনেকে মনে করে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারাই অনলাইন বিজনেস করে। এখন একটু চোখ খুলে দেখলেই বুঝবেন সব প্রতিষ্ঠিত ফ্যামিলির শিক্ষিত মেয়েরাই অনলাইন ব্যাবসা নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেঁচে নিচ্ছে। আসুন সবাইকে সম্মানের চোখে দেখি। কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো কাজ করে যাই। সময় কথা বলবে। নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে, লক্ষ্যে পৌছাতে সময় লাগবে না। সব কিছুর জন্য আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি আমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে। আমার পরিবার আর আমার প্রিয় ভাইয়া আপুদের কাছে যাদের ভালোবাসায় এই পর্যায়ে এতো কম সময়ে আসতে পেরেছি।

সাজেদুর আবেদীন শান্ত
ফিচার লেখক ও গণ্যমাধমকর্মী

আপনার মন্তব্য লিখুন