ডেস্ক রিপোর্ট:: ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সরকার গঠনের পর থেকেই নির্বাচন আগে নাকি সংস্কার—বিতর্ক এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

চলমান প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ বর্তমানে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় দেশে বর্তমানে বড় দুটি দল বিএনপি ও জামায়াত রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আওয়ামী সরকারের আমলে ‘পাতানো’ নির্বাচনে দল দুটি অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল। কিন্তু পটপরিবর্তনের সাথে সাথে ফের নির্বাচনী মাঠে সরব দল দুটি। বিএনপি বরাবরই নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপ দিতে থাকলেও জামায়াত চায় সংস্কারের পরে নির্বাচন। এমনকি এ নিয়ে তাদের এক সময়ের মিত্র ও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও ৩০০ আসনের ৭০ সংসদীয় আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে সংস্কারের পরে নির্বাচন চাওয়া জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে ৮টি, নেত্রকোনার ৫টি, ফরিদপুরের ৪টি, কিশোরগঞ্জের ৫টি, ময়মনসিংহের এগারটির মধ্যে ১০টি, মৌলভীবাজারে ৪টি, দিনাজপুরে ৬টি, শেরপুরের ৩টি, কিশোরগঞ্জে ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি, পঞ্চগড়ের ২টি, পটুয়াখালি ৪টি, সুনামগঞ্জে ৫টি ও পিরোজপুরে ৩টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

তবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলীয় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তাদের দল যোগ্য প্রার্থী বের করতে একটি বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তবে কেন্দ্র থেকে তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেনি। এটি তাদের প্রাথমিক বাছাইয়ের অংশ, যা দলটি ৩০০ সংসদীয় আসনেই নিয়েছে। বাকি ২৩০ আসনেও সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

টাঙ্গাইল ৮ আসনে প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) অধ্যক্ষ মন্তাজ আলী, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) হুমায়ূন কবীর, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) হুসনে মোবরক বাবুল, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) প্রফেসর খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক, টাঙ্গাইল-৫ (টাঙ্গাইল সদর) আহসান হাবীব মাসুদ, টাঙ্গাইল-৬ (বাসাইল-সখীপুর) শফিকুল ইসলাম খান, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ তালুকদার এবং টাঙ্গাইল-৮ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনে ডাক্তার আব্দুল হামিদ।

ফরিদপুর ৪ সংসদীয় আসনে প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীরা হলেন ফরিদপুর-১ আসনে ঢাকা জেলা শাখার শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ড. ইলিয়াছ মোল্লা, ফরিদপুর-২ আসনে মনোনীত প্রার্থী নগরকান্দা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সোহরাব হোসেন, ফরিদপুর-৩ সদর আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও ফরিদপুর অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক আব্দুত তাওয়াব ও ফরিদপুর-৪ আসনে ভাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা সরোয়ার হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

নেত্রকোণা ৫টি আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন, নেত্রকোনা-১, দূর্গাপুর-কলামাকান্দা আসনে জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও কলমাকান্দা উপজেলা আমির অধ্যাপক মাওলানা আবুল হাশেম, নেত্রকোনা-২, সদর-বারহাট্রা আসনে সাবেক জেলা আমির ও ময়মনসিংহ অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাওলানা এনামূল হক, নেত্রকোনা-৩, আটপাড়া কেন্দুয়া আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও আটপাড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান দেলাওয়ার হোসেন সাইফুল, নেত্রকোনা-৪, মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী আসনে ময়মনসিংহ মহানগরী জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আল হেলাল তালুকদার, নেত্রকোনা-৫, পূর্বধলা আসনে জেলা জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ও পূর্বধলা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা।

কিশোরগঞ্জে ছয়টির মধ্যে ৫টি সংসদীয় আসনের মনোনীত প্রার্থীরা হলেন- কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর উপজেলা) আসনে অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক আলী ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া উপজেলা) আসনে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মোড়ল, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলা) আসনে শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর উপজেলা) আসনে কিশোরগঞ্জ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী, কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়াচর উপজেলা) আসনে ভৈরব উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা কবির হুসাইন।

ময়মনসিংহের এগারটির মধ্যে ১০টি সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা হলেন- ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে মাহফুজুর রহমান, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে মাহবুব মণ্ডল, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মাওলানা বদরুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনে মতিউর রহমান আকন্দ, ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া) আসনে কামরুল হাসান, ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনে আসাদুজ্জামান, ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) আসনে মঞ্জুরুল হক, ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে ইসমাইল হোসেন ও ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে সাইফ উল্লাহ পাঠান। ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

মৌলভীবাজার জেলার চারটি আসনে প্রার্থীরা হলেন- মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ি) আসনে, মাওলানা আমিনুল ইসলাম (জেলা মজলিশে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য), মৌলভীবাজার-২ আসনে (কুলাউড়া) ইঞ্জিনিয়ার মো :শাহেদ আলী, (জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য)।

দিনাজপুরের ৬টি আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মতিউর রহমান, দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে অধ্যক্ষ মাওলানা এ কে এম আফজালুল আনাম। দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে অ্যাডভোকেট ময়নুল আলম, দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনে মো. আফতাব উদ্দিন মোল্লা, দিনাজপুর-৫ (ফুলবাড়ী-পার্বতীপুর) আসনে শিক্ষাবিদ মো. আনোয়ার হোসেন, দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট) আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

শেরপুর ৩টি সংসদীয় আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন, শেরপুর সদর-১ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, শেরপুর ২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে ইসলামী ছাত্রশিবির এর সাবেক কেন্দ্রীয় বিতর্ক সম্পাদক ও জেলা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সদস্য মু. গোলাম কিবরিয়া ভিপি ও শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনে শেরপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলহাজ্ব নুরুজ্জামান বাদল।

কিশোরগঞ্জ জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন, কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জেলা নায়েবে আমির ও বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোসাদ্দেক ভূঁইয়া, কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও কটিয়াদী উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা শফিকুল ইসলাম মোড়ল, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর শাখার আইন বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ মো. রোকন রেজা, কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা আমীর অধ্যাপক মো. রমজান আলী এবং কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে সাবেক ছাত্রনেতা ও ভৈরব উপজেলা আমীর মাওলানা মো. কবীর হোসাইন।

পঞ্চগড়ে দুটি আসনে মনোনীত প্রার্থীরা হলেন, পঞ্চগড়-১ (পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী) আসনে পঞ্চগড় জেলা জামায়াতের আমির ও তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন এবং পঞ্চগড়-২ (দেবীগঞ্জ,বোদা) আসনে বোদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বোদা উপজেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মো. সফিউল্লাহ সুফির নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর ৪টি আসনে মনোনীতরা হলেন, পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) আসনে জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান, পটুয়াখালী-২ (বাউফল) ঢাকা মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে জামায়াতের সাবেক জেলা আমির অধ্যাপক শাহ আলম ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল কাওয়ুম।

সুনামগঞ্জে ৫টি সংসদীয় আসনে মনোনীতরা হলেন, সুনামগঞ্জ-১ আসনে লড়বেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জনপ্রিয় আইনজীবী শিশির মনির, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে অ্যাড. ইয়াছিন খান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে মুহাম্মদ শামসউদ্দীন ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনে অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী।

পিরোজপুরে ৩টি আসনে ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন- পিরোজপুর-১ (সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী) আসনে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাইদী, পিরোজপুর-২ (নেছারাবাদ, কাউখালি ও ভান্ডারিয়া) আসনে আল্লামা সাইদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শামীম সাইদী ও পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মঠবাড়িয়া উপজেলা আমির অধ্যাপক শরীফ মোহাম্মদ আব্দুল জলীল।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো: ইজ্জত উল্ল্যাহ বলেন, আমাদের ৩০০ সংসদীয় আসনের জন্যই প্রস্তুতি রয়েছে। বাছাই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে যাদেরকে বাছাই করা হচ্ছে, তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের প্রাথমিক প্রস্তুতির অংশ এটি। আমরা প্রার্থীদের বলে দিয়েছি, যদি তারা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে তাহলে তাদের চূড়ান্ত করা হতে পারে। কেন্দ্র তাদের একটা সুযোগ দিয়েছে তারা জনপ্রিয় হলে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করবে।

এদিকে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান দেশব্যাপী দলীয় ইউনিটগুলোকে সক্রিয় করতে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। এই সফরগুলোতে তিনি কর্মীসভা ও অন্যান্য কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। ৫ আগস্টের পর দলীয়ভাবে ব্যাপক জনসমাগম নিয়ে জামায়াতই একমাত্র দল বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করছেন।