রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।। শীতকালীন সবজি মুলা চাষ করেছেন লালমনিরহাটের কৃষক হামিদুল মিয়া। পরিষ্কার করতে না পারায় একই জমিতে আলু রোপণে দেরি হয়ে যাচ্ছে। কারণ মুলার কোনো ক্রেতা নেই, যারা আসছেন প্রতি মণ ১০-১৫ টাকা বলছেন। ফলে মুলাই এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে হামিদুলের মতো জেলার অনেক কৃষকের। আলু রোপণের স্বার্থে তারা এখন পাইকারদের বিনামূল্যে মুলা দিয়ে দিচ্ছেন।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, পাঁচ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে কতটুকু জমিতে মুলা চাষ হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে জেলার সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণে মুলাসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে জেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা প্রকারভেদে ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন খুচরা বাজারে ২-৩ টাকা কেজি হলেও পাইকারিতে ১০-১৫ টাকা মণও নিচ্ছে না। ফলে ক্ষেত থেকে মুলা তুলতে যে শ্রমিক খরচ, তাও উঠছে না কৃষকের।
আক্ষেপ করে চাষিরা বলছেন, আগাম মুলা নষ্ট হয়েছে বৃষ্টি-বন্যাতে। দ্বিতীয় দফায় ফলন ভালো হলেও দাম নেই। এক মণ মুলা বেচে ১০০ গ্রাম চালও কেনা যাচ্ছে না। এখন বাজারে প্রতি কেজি সাধারণ মানের আটাশ চালও কিনতে লাগে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা। আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক আজাহার আলী (৫২), ধীরেন্দ্র নাথ (৫৫), কমলাবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক বেচু মিয়া, জিয়াব উদ্দিন ও জয়নাল হক জানান, মুলা নিয়ে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রতি দোন জমির (২৭ শতক) মুলা বিক্রি করেও ১ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মুলার ক্রেতা নেই। পরের ফসল আবাদের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আলু ও ভুট্টা লাগানোর জন্য ব্যবসায়ীদের এখন তারা বিনামূল্যে মুলা দিচ্ছেন। তারা নিজ খরচে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
গত রবিবার সরেজমিন পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নবীনগর গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা ট্রাক্টর দিয়ে মুলাক্ষেত নষ্ট করছেন। চাষি রেজাউল করিম সবুজ বলেন, ‘এবার ১০ বিঘা জমিতে মুলা চাষ করেছি। প্রথমবার ৪৫ ও দ্বিতীয়বার ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দাম না পাওয়ায় নিজেই মুলা নষ্ট করছি। ভুট্টা-আলু লাগালে হয়তো ক্ষতি কিছুটা পোষানো যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামীম আশরাফ বলেন, ‘রবি মৌসুমে বেশিরভাগ চাষি মুলা আবাদ করেছেন। বাজারে চাহিদা না থাকায় তারা দাম পাচ্ছেন না। যেকোনো ফসল ফলানোর আগে চাহিদার বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।’