লাবিব আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা:: চুয়াডাঙ্গা শহরের শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউজের মোরগ পোলাও খেয়ে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীসহ পরিবারের আরও ১০ সদস্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসুস্থদের মধ্যে তিন শিক্ষককে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অসুস্থ শিক্ষক-কর্মচারীরা হলেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজিদ সেতু, স্নিগ্ধা রানী শীল, তুষার শুভ্র রায়, শামীম হোসেন ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, রাজু আহমেদ, রওশন সোনিয়া, মামুন মুন্সী, স্মৃতি শান্তি, শাকিল আরাফাত ও তার ছেলে, সেলিম রেজা, শিক্ষক শাহজাহান আলীর ছেলে এবং শিক্ষক মতিয়ার রহমানের মেয়ে মিথিলা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছেলেসন্তান হওয়ায় ‘ট্রিট’ হিসেবে রোববার (১৩ আগস্ট) সহকর্মীদের শহরের চুয়াডাঙ্গা শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউজের মোরগ পোলাও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রওশন আক্তার। ওইদিন দুপুরে ওই খাবার খেয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ ২০ জনের বেশি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থদের মধ্যে অনেকেই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন এখনো তিনজন শিক্ষক।
সহকারী শিক্ষক শামীম হোসেন বলেন, ‘মোরগ পোলাও বাড়িতে নিয়ে এসে দুপুরে আমি ও আমার গর্ভবতী স্ত্রী খেয়েছিলাম। মধ্যরাতে আমারা দুজনই ডায়রিয়া আক্রান্ত হই। ওই রাতেই আমাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সকালে আমার স্ত্রীও চিকিৎসা নিয়েছেন। এ খাবার খাওয়ার পর থেকেই আমাদের ডায়রিয়া ও বমি শুরু হয়েছে। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তাকে নিয়ে চিন্তিত আছি।’
শিক্ষিকা রওশন আক্তারের স্বামী ঢাকা তেঁজগাও মহিলা কলেজের অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই বিষয়টি জানিয়েছেন। এ খাবার খাওয়ার পর আমার স্ত্রীও পেট ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমি শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউজ থেকে খাবারগুলো নিয়ে এসেছিলাম।’
চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজিদ আহমেদ সেতু বলেন, ‘আমরা রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা শহরের শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউজ থেকে ৫০ প্যাকেট বিরিয়ানি এনে দুপুর ২টার মধ্যে খাওয়া-দাওয়া শেষ করি। পরে রাতে প্রায় সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।’
বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মহসীন আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই মোরগ পোলাও নিঃসন্দেহে বাসি ছিল। রাতের বাসি পোলাও নতুন পোলাওয়ের সঙ্গে বিক্রি করেছে, যা খেয়ে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী ও পরিবারের সদস্যসহ আমরা ২০ জনের বেশি মানুষ অসুস্থ হই। অসুস্থতার কারণে আটজন শিক্ষক সোমবার (১৪ আগস্ট) বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে পারেননি। এতে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে তিনজন শিক্ষক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আমরা এ বিষয়ে কয়েকবার ওই বিরিয়ানি হাউজে গিয়েছি কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক গা ঢাকা দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে শাহী নান্না বিরিয়ানি হাউজের স্বত্বাধিকারী মো. ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা তো ভালো বিরিয়ানিই দিয়েছি, এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিরিয়ানি দুই ঘণ্টার মধ্যে খাওয়ার জন্য আমাদের প্যাকেটেই নির্দেশনা আছে। কেউ দেরি করে খেলে তো আমরা দায়ী হবো না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।