হুট করেই রেগে যাচ্ছেন, বিপদ ঠেকাতে যা করবেন
অল্পতে যারা অতিরিক্ত রেগে যান, তাদের জন্য দুঃসংবাদ দিলেন মনোচিকিৎসকরা। তাদের মতে, অতিরিক্ত রাগের কারণে মানুষের শরীরে এক ধরনের স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যার প্রভাবে হৃদস্পন্দনের হার অর্থাৎ হার্ট রেট ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। এতে হৃদরোগের আশঙ্কা তৈরির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
ভারতীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, মারাত্মক রাগ এমন একটি জিনিস, যা মানুষকে একা করে দেয়। তার হাত ধরে বাড়ে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা। কখনও প্রবল অবসাদ। শরীরের জন্য সবকটিই ক্ষতিকারক। অতএব যে কোনও মূল্যে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার।
রাগ নিয়ন্ত্রণে নিতে কিছু কৌশলের কথা জানিয়েছেন এই চিকিৎসক-
• আপনার যে রাগ বেশি সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। এর জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়। যে ঘটনায় আপনি রেগে যান, তাতে অনেকেই মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন।
• এবার ঠিক করুন রাগ কমাবেন এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন।
• কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন। সে রকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, চেষ্টা করুন। এর জন্য যদি একটু নত হতে হয় সেও ভালো।
• নত হতে হয়েছে বলে যদি খারাপ লাগে, ভেবে দেখুন এর বিনিময়ে আপনার শরীর, মানসিক শান্তি, সম্পর্ক সবই কিন্তু রক্ষা পেল।
• চেষ্টা করেও পরিস্থিতি এড়াতে না পারলে প্রতিজ্ঞা করুন, যাই ঘটে আপনি শুধু শুনে বা দেখে যাবেন, রাগবেন না। এমন কথা বলবেন না যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়।
• চেষ্টা বিফলে গেলে অস্থির হবেন না। অন্য আবেগের মতো রাগও কিছুক্ষণের মধ্যে কমতে শুরু করবে। ধৈর্য ধরুন। মুখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে সে জায়গা থেকে সরে হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ, মাথায় জল ঢালুন, ঘরের কাজ করুন, কারও সঙ্গে কথা বলে মাথা ঠান্ডা করে নিন।
• এ সব সম্ভব না হলে কাজে আসবে সুইচ অফ-সুইচ অন মেকানিজম এবং ভিজুয়াল ইমেজারি। এ হলো পরিস্থিতির মাঝখানে বসে গভীরভাবে অন্য পছন্দের কোন কিছু নিয়ে ভাববেন, যাতে মন চলে যায় অন্য কোনও জগতে। চিকিৎসকের কাছে শিখে ঘরে প্র্যাকটিস করলে বিপদের সময় কাজে লাগবে।
• এছাড়া যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর-মন ঠান্ডা থাকে। চট করে রাগ হয় না বা হলেও কমে যায়।
• অতিরিক্ত রাগে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি চিকিৎসা করালে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যার প্রথম ধাপ নিজের মনকে বুঝে নেওয়া।
যেমন–
১. আপনার কি চাহিদা খুব বেশি?
২. আপনার কি ইগো খুব বেশি? হতাশা বা দুঃখ এলে তা মানতে পারেন না? তাকে রাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন?
৩. জীবনে যা ঘটছে তাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না?
৪. সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রাগ হয়ে যায়?
এই চারটি প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে রাগের কারণ। চাহিদা বেশি হলে তা না মিটলে রাগ হবে। ইগো বেশি হলে চাহিদা না মেটায় যে হতাশা বা দুঃখ হয় তা প্রকাশ করতে বা স্বীকার করতে লজ্জা হয়। ফলে তা চাপা পড়ে রাগের আড়ালে। প্রতিটি বিষয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে হতাশা এবং দুঃখ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে। হতাশা এবং দুঃখ জমতে জমতে হয় তা রাগ হিসেবে দেখা দেয়, নয়তো মানসিক অবসাদ আসে।
সমস্যা সামনে, কী করব জানা নেই, এই অবস্থাতেও সঙ্গী হয় রাগ বা মানসিক অবসাদ। এই সমস্যার মধ্যে কোনটা আপনার আছে ভেবে দেখুন। খুঁজে পেলে ভাবনা-চিন্তা করে তাদের সামলাতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।