আশরাফুল হক, লালমনিরহাট।। লকডাউন উঠে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিধি মানছে না গ্রামীন পশুর হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাই মাস্ক ও হাত মাইক নিয়ে লালমনিরহাটের কোরবানির পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধির প্রচারনা করছেন এনজিও ব্র্যাক কর্মীরা। জানা গেছে, করোনা সংক্রামন রোধে ১জুলাই থেকে দুই দফায় টানা ১৪দিন সারাদেশে লকডাউন ঘোষনা করে সরকার। লকডাউন চলাকালিন সময় ভ্রাম্যমান আদালতসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় শহর গ্রাম সবখানে মাস্কসহ সাধ্যমত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার চেষ্টা করেছে মানুষ। সরকারী এ নির্দেশনা অমান্য করে অযথা বাহিরে ঘোরাফেরার করার দায়ে লালমনিরহাটে সাড়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
আইন প্রয়োগে জরিমানা করেই মানুষকে ঘরে আটকানো সম্ভব হয়নি। আসন্ন ঈদ উল আযাহাকে সামনে রেখে কোরবানীর পশু ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে চরম বিপাকে পড়ে সাধারন মানুষ। তাই সরকারী ভাবে লকডাউন প্রায় এক সপ্তাহের জন্য বিরতি ঘোষনা করে সরকার। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাটসহ শপিংমল ও গণপরিবহন চালুর ঘোষনা দেয় সরকার। শহরের পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানলেও গ্রামীন পশুর হাটে এর বালাই নেই। করোনার প্রাদুর্ভাব রুখতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আন্তর্জাতিক এনজিও ব্র্যাকের কর্মীরা লালমনিরহাটের বড় বড় পশুর হাটসহ জনসমাগম স্থলে ফ্রিতে মাস্ক বিতরন, ব্যানার সাঁটানো, লিফলেট ও হাত মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু হাট-বাজার নয়, গ্রামীন বাড়ি বাড়ি গিয়েও প্রচারনাসহ পরামর্শ দিচ্ছেন এনজিও কর্মী। জেলার ৫টি উপজেলায় এ কাজে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন ব্র্যাকের ৬৪০জন স্বাস্থ্য সেবিকা, ৬৪জন স্বাস্থ্যকর্মী, ২৭জন ভোলান্টিয়ার, ও ২২৯জন নিয়মিত মাঠ কর্মী।
ব্র্যাক লালমনিরহাট আঞ্চলিক কার্যালয় জানায়, করোনা সংক্রামন রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। তাই মাস্ক বিতরনের পাশাপাশি ব্যানার, লিফলেট ও হাত মাইকে প্রচারনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলা ও দুইটি পৌরসভায় ইতোমধ্যে সাড়ে ৫লাখ পিস মাস্ক বিতরন করা হয়েছে। যা জেলা প্রশাসক আবু জাফর উদ্বোধন করেছেন। আগামী ৪মাস এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ ছাড়াও লকডাউনে কর্মহীন সময়ে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের সঞ্চিত অর্থ বিকাশের মাধ্যমে ফেরৎ দেয়া হচ্ছে। লকডাউনে বেকার থাকা মাঠকর্মীদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি দৈনিক ভাতায় ভোলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাপ্টানা নয়ারহাট এলাকার ব্র্যাক সদস্য হালিমা বেগম বলেন, বিপদের দিনের জন্য টাকা সঞ্চয় করেছি। করোনার কারনে কাজ কাম নেই। খাবার নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। হঠাৎ ফোন করে ব্র্যাকে থাকা সঞ্চয়ের ২ হাজার টাকা বিকাশে ফেরৎ দিয়েছে। তারা বাড়িতে মাস্কও পাঠিয়েছে। কুষ্টারীরহাটের ইজাদার মোনাব্বের চৌধুরী বলেন, মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ব্র্যাককর্মীরা ব্যানার,লিফলেট ও মাস্ক বিতরনের পাশাপাশি হাত মাইকে সচেতনতার প্রচারনা করছেন।
সরকারের পাশাপাশি এনজিওদের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বাকীদেরও মানবতার সেবায় এগিয়া আসার আহবান জানান তিনি।
ব্র্যাক লালমনিরহাট আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (দাবি) নাজমুল হক বলেন, মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ব্র্যাক জন্মলগ্ন থেকে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। করোনা সংক্রামন রোধে লকডাউনের এ সংকটে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কানাডা ও ইউকে'র যৌথ অর্থায়নে করোনা প্রতিরোধের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক। আগামীতে ব্র্যাক করোনা পরীক্ষার কাজটিও স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যক্ষা নিরোধ ইউনিটে বিনামুল্যে করবে বলেও জানান তিনি।