মনজু হোসেন,স্টাফ রিপোর্টারঃ স্বামীকে না পেয়ে বুকভরা বেদনা নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ভারতীয় তরুণী রিয়া বালা। কিন্তু সেই স্বামীর টানে ফিরে যাওয়ার চারদিনের মাথায় আবার বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন এ তরুণী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, বুধবার বিকেলে ভারতীয় ওই নারী বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসেন। পরে তাকে তার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাকে বরণ করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়ায় প্রবেশ করেন তিনি। বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে অবস্থান করে ইমিগ্রেশন কাজ শেষ করে অপেক্ষা করছিলেন স্বামীর পরিবারের লোকজন আসার।
ভারতীয় এ তরুণী আসার খবরে ইমিগ্রেশনে গিয়ে হাজির হন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফজলে রাব্বি ও মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় এ তরুণীর শ্বশুর শ্রী নিখিল চন্দ্র রায়। পরে তারা প্রশাসনের উপস্থিতিতে অঙ্গীকার করে স্বামীর গৃহে ফিরে যান এ নারী।
এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর স্বামীকে খুঁজতে বাংলাদেশে ছুটে আসে রিয়া বালা। কিন্তু তার আসার খবর পেয়ে ভয়ে গা ঢাকা দেয় স্বামী বিটু রায়। স্বামীর গৃহে তিনদিন থাকার পর নিরাপত্তা শঙ্কায় প্রশাসনকে জানালে ২ ডিসেম্বর তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে মডেল থানায় নারী-শিশু সেলে রাখা হয়। পরের দিন ৩ ডিসেম্বর থানায় তার শ্বশুর আসলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে রিয়া বালাকে তার দেশে (ভারত) পাঠিয়ে দেয়া হয়। দেশে যাওয়ার তিনদিন পর আবার স্বামীর সাথে ঘর সংসার করতে ছুটে আসলেন এ নারী।
এ দম্পতি সম্পর্কে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমু’র মাধ্যমে রিয়া বালার সম্পর্ক হয় বাংলাদেশি তরুণ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দেবনগর ইউনিয়নের শিবচন্ডী এলাকার অখিল চন্দ্র রায়ের ছেলে ২৪ বছর বয়সী বিটু রায়ের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার শিকারপুর এলাকায় পিসির বাড়িতে রিয়া বালাকে বিয়ে করেন বিটু রায়। বিয়ের পর এক মাস ভাড়া বাড়িতে থাকেন তারা। তারপর বিটু দেশে ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমনকি বিয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করেন। স্বামী বিটু রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পাসপোর্ট-ভিসা করে গত ২৯ নভেম্বর ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা ইমিপ্রেশন হয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগরের শিবচন্ডীতে স্বামীর বাড়িতে চলে যান।
কিন্তু তার আসার খবর পেয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান স্বামী বিটু রায়। তিনদিন শ্বশুর বাড়িতে থাকার পর স্বামীকে না পেয়ে নিরাপত্তার শঙ্কায় ভোগেন তিনি। পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান আলীকে বিষয়টি জানালে চেয়ারম্যান ঘটনাটি ইউএনওকে জানালে সেখান থেকে উদ্ধার করে থানায় নিরাপত্তা দিয়ে পরের দিন দেশে পাঠিয়ে দেন প্রশাসন।স্বামীকে না পেয়ে এক বুক বেদনা নিয়ে ফিরে গেছেন এ ভারতীয় তরুণী। রিয়া বালা ভারতের বর্ধমান জেলার অম্বিকা কালনা এলাকার শ্যামল কান্তি বালার মেয়ে।
রিয়া বালা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমুর মাধ্যমে তার (বিটু রায়) সঙ্গে আমার পরিচয় তারপর আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। বিয়ে করে এক মাস আমার সঙ্গে থেকে কৌশলে টাকা, কাপড়সহ অনেক কিছু নিয়ে দেশে চলে যায়। আমি স্বামীর অধিকার পেতে গত ২৯ নভেম্বর পাসপোর্ট ভিসা করে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় স্বামীর বাড়িতে যাই। কিন্তু স্বামী না থাকায় তিনদিন পর প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাকে দেশে ফিরে যেতে হয়। আজ আবার এসেছি। আমাকে নিতে আমার শ্বশুরসহ তার পরিবারের লোকজন এসেছেন।
ছবির ক্যাপশন-
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে ভারতীয় নারী রিয়া বালা, পাশে শ্বশুর