এনামুল ইসলাম,স্টাফ রিপোর্টার:: মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ অমান্য করে একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ উচ্চ-বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে মো. ইলিয়াস মিয়াকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বিদ্যালয়ের বিতর্কিত ম্যানেজিং কমিটি। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, কোনো ধরনের নির্বাচন ছাড়াই গোপনে ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি করা হয়। এর প্রতিবাদ জানিয়ে রিট পিটিশন করলে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয় এই ম্যানেজিং কমিটি।
ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক আবু হাছান খান বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ছাড়া গোপনে বেআইনীভাবে গঠন করার পর আমি অভিভাবকদের সমর্থন নিয়ে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করি। রিট পিটিশন নং ৮২২৩/২০২৩। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ৩ মাসের জন্য কমিটির কার্যক্রম স্থগিতাদেশ দেন, কিন্তু বর্তমান কমিটি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেন।
জানা যায়, পরবর্তীতে তর্কিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে আপিল করেন (সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ২৫৫৯/২০২৩) শুনানী অন্তে মাননীয় চেম্বার কোর্ট সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্টে (মাননীয় প্রধান বিচারপতির আদালতে) আগামী ১৬ অক্টোবর আদালতের কার্যতালিকায় শুনানীর জন্য তারিখ নির্ধারণ করে উক্ত নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত স্থিতি অবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ প্রদান করেন।
আরও জানা যায়, ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বির্তকিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামীম হোসেন স্কুলের গন্ডি পাড় না হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্কুলের সভাপতি হয়েছে। এছাড়াও ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য ড. হাছান খানসহ ম্যানেজিং কমিটির
কয়েকজনের নামেই গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
একটি প্রভাব শালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে আদালত অবমাননাকর এই কাজ করিতেছে। এদেরকে সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে শিক্ষক,শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে জানতে ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শামীম হোসেনকে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার ৯নং বালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ফরক্কাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ হান্নান মিজি জানান, বিগত ২০২০ সালে আয়শা খন্দকার নামীয় একটি ফেইসবুক আইডি থেকে শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ, জেলা- উপজেলা আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে মানহানিকর মিথ্যা তথ্য প্রচার করে।
সাবেক এ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষা মন্ত্রী ও নেতা কর্মীদের মান সন্মান রক্ষার্থে আমি আয়শা খন্দকার আইডির বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করি। চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ তদন্ত করে ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের আইসিটি রুম থেকে তথ্য প্রমাণসহ ৩ জন শিক্ষককে হাতে নাতে গ্রেফতার করে। মাউশির তদন্তে জাল সাটিফিকেট প্রমাণিত হওয়ায় তাদের চাকরি চলে যায়। জেল হাজত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তারা আমার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করতে থাকে সবগুলো অভিযোগ তদন্ত হয়। আমার বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমাণ করতে পারে না। দুঃখের বিষয় ২০২৩ সালে একটি প্রভাব শালী মহলের চাপে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কয়েকটি অযৌক্তিক মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমার এমপিও বাতিল করে দেয়। আমি সাথে সাথে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করি। রিট পিটিশন নং ৫১৩৯/২৩। মহামান্য হাইকোর্ট আমার এমপিও চলমান রাখার নির্দেশনা দিয়ে আদেশ জারি করেন।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমার এমপিও চলমান না রেখে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। আপিলের আদেশও আমার পক্ষে আসে। তারপর ও আমার এমপিও চলমান করে নাই। এদিকে বিদ্যালয় কতৃপক্ষ আইনের তোয়াক্কা না করে বেআইনী ভাবে আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে । একটি প্রভাব শালী মহল ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমার উপর এই অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে ।
মোঃ হান্নান মিজি গত ২৮ বছর শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘ ৩৯ বছর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের পদ পদবী নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে রাজনীতি করিয়া আসছেন। তাহার উপর এই অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা বলতে গিয়ে জানান আমি দুঃখ কষ্টে অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।আমি ন্যায় বিচার চাচ্ছি।