মোকছেদ আল মামুন,স্টাফ রিপোর্টার।। বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মেহেদী রাসেল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বামনডাঙ্গা আঞ্চলিক ছাত্রদলের ২০০১ সালে যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং ২০০৩ সালে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা ছাত্র দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে । এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরের ঘটনায় রাসেলের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় জিআর ২৭৫/২০১০ নং মামলা দায়ের করা হয়েছিল বলে সূত্র মারফত জানা গেছে।
এ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিসহ জেলা, উপজেলা কমিটির নিকট অভিযোগ করেছেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। অভিযোগের আলোকে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ অনলাইন গণমাধ্যমে উপজেলার কর্মরত সংবাদকর্মীরা সংবাদ প্রচার করলে ছাত্রদল তথা বিএনপির তকমা গা থেকে মুছে ফেলতে গিয়ে গাইবান্ধা জেলা শহরে আব্দুল্লাহ আল মেহেদী রাসেল করেছেন দু'দুটি পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন। সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য রাসেলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করা হয়।
এই সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে এখন কঠোর সমালোচনার ঝড়। পাঠকদের জন্য চমকপ্রদ কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট ও কমেন্ট হুবহু তুলে ধরা হলো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি খয়বর হোসেন সরকার মওলা তার ফেসবুকে স্টাটাস দিয়ে লিখেছেন:
একজন খ্যাতিমান লেখকের উক্তি দিয়ে শুরু করি, 'আগে গৃহস্থ ধরত চোরের হাত, আর এখন চোর ধরে গৃহস্থের হাত।' আরো সহজ ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি গ্রাম্য প্রবাদ সবার মুখে মুখে শুনতাম 'চোরের মায়ের ডাংগর গলা।'
আবহমান বাংলার এইগুলি চিরন্তন বাণী। চন্দ্র-সূর্যের মত চিরসত্য এই বাণীগুলির প্রকৃষ্ট এবং যুৎসই প্রমাণ মাত্র ফেসবুকে দেখলাম। এক সময়ের বিএনপির ডাক সাইটে ছাত্র নেতা জনৈক আবদুল্লাহ আল মেহেদী রাসেল বিএনপির তকমা গা থেকে মুছে ফেলতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন। তিনি সুন্দরভাবে নিজের পরিচয় দিয়ে নিজেকে উপস্থাপন করলেন। তিনি একজন আওয়ামী পরিবারের সন্তান, তিনি কলেজের প্রভাষক, চেয়ারম্যান প্রার্থী, বিভিন্ন সংগঠনের বিশিষ্ট নেতা ইত্যাদি। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্র লীগের বেশির ভাগ নেতা কর্মী শত্রুতা বশতঃ বা ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে অন্যায় ভাবে সাবেক ছাত্রদলের নেতা বানানোর চেষ্টা করছে যার প্রতিবাদে এই সাংবাদিক সম্মেলন।
হালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ কারীদের মুখোশ ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হচ্ছে। কাউকেই ১০০% মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে এরকম সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা যায় নি। সেই যায়গায় পুরূষোত্তম মহাবীর রাসেলকে সাবাসি দিতেই হয়। বাপের যোগ্য বেটা একখানা। আর হবেই না বা কেন? 'চোরে চোরে যে মাসতুতো ভাই।' যার ছায়া তলে দাড়িয়ে, যার উচ্ছিষ্ট খেয়ে খেয়ে বিএনপির মহানায়ক এখন আওয়ামী লীগের রাজমুকুট মাথায় পরেছে সেই ছায়া দানকারী নেতাই তো বিএনপি পরিবার থেকে আগত। সুতারং শয়তান সাবধান। জনগন ক্ষেপলে তোমার বিএনপির এই নড়বড়ে খুটি পর্যন্ত ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে।
মানুষ পাপ করে অনুতপ্ত হলে, মার্জনা ভিক্ষা করলে, মহানুভব আমজনতা বেশির ভাগই মাফ করে দেয়। সেটি না করে উল্টো যারা জন্ম থেকে বিতর্কহীন ভাবে আওয়ামী লীগ করে, যাদের ত্যাগ তিতিক্ষায় সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগ এখনও দাড়িয়ে আছে তাদেরকে যাচ্ছে তাই ভাবে গালাগালি করবে, ছাত্র লীগ নেতাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিবে, আর ত্যাগী আওয়ামী লীগাররা মুখে আংগুল দিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখবে সেদিন শেষ। দলের মধ্যে শুধু মাত্র পয়সা ছিটিয়ে নিজের পাপ ঢাকার ব্যার্থ চেষ্টা করা, উপদল সৃষ্টি করে দলকে ধ্বংসের পরিকল্পনা করা কেউ মেনে নেবে না। প্রকৃতির নিয়মেই তোমার বিনাশ অবশম্ভাবি।
মানুষের নির্লজ্জতারও, বেহায়াপনারও একটা সীমা থাকে। এই নিকৃষ্ট মিথ্যাচার যারা প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে করতে পারে, তারা যে কোন দল করা তো দুরের কথা, শিক্ষকতার মত মহান পেশায় থাকা তো দুরের কথা তাকে বনে জংগলে গিয়ে পশুর সাথে বসবাস করা উচিৎ।
তার বিএনপির সব সাথীরা যাদের সঙ্গে সে বিএনপির ছাত্রদল করেছে তারা সবাই এখন জীবিত আছে সর্বোপরি যে স্ক্যানের অভিযোগ সে তুলেছে আদালতের মাধ্যমে সেটি প্রমান করার ব্যবস্থা অবিলম্বে করা হবে। পরিশেষে রাজনীতিতে সাফাই স্বাক্ষীর এক নতুন চমক শুরু হয়েছে সুন্দরগঞ্জে। মহামহিম নেতৃবৃন্দ, অন্যায় কারীকে বাঁচাতে নিজেদের বিক্রি করবেন না। তাতে আপনার লাভ, দলের লাভ, দেশের লাভ। বোধোদয় হোক সকল বিক্রিত নেতাদের।
মোঃ রিপন নামের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খয়বর হোসেন সরকার মওলার পোষ্টে মন্তব্য করে লিখেছেন, "অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড লীগের কাছে আজ জিম্মি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির একাধিক নেতা। তারা রাসেলের ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ না দিয়ে বরং রাসেল কে ত্যাগী নেতা বানিয়ে প্রত্যায়ন দেওয়ার অর্থ বুঝে নিন। ২০০০ পরবর্তী সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিহাস আমি নিজেই সুতরাং আজ যারাই রাসেল কে ত্যাগী নেতা বানানোর অপচেষ্টা করে ইতিহাস বিকৃত করার নগ্ন খেলায় মেতেছে। ইতিহাস স্বাহ্মী তাদের ধংস অনিবার্য। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনাকে সত্য গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য। জয় বাংলা।"
বিপি আশরাফুল ইসলাম নামের একজন যুবলীগ নেতা রাসেলের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, 'সংবাদ সম্মেলন শেয়াৱ দেখলাম, এখন দেখি নাই ৷ হা..হা...হা।'
অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক এবং ভালোবাসি সুন্দরগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রেজাউল আলম রেজা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন: কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন। প্রতিহিংসা থেকে বেরিয়ে আসুন।
অন্য দিকে জাতীয় দৈনিক "সময়ের আলো" পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে "ছাত্রদল থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক" শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে সুন্দরগঞ্জ প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও প্রতিবেদক বাপ্পি রাম রায়কে মামলা- হামলাসহ দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয় বলে জানা গেছে।