রাশেদুল ইসলাম রাশেদ: ঘাঘট নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও শহীদ মিনারসহ দুটি ভবন। এছাড়া ভাঙনের মুখে আছে দুই শতাধিক বসতবাড়ি, মসজিদ ও মাজারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
দীর্ঘদিন ধরে ঘাঘট নদীর ভাঙন তীব্র হলেও ভাঙনরোধে প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। নদীপাড়ে পাকা বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো ভাঙন থেকে রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘাঘট নদী ব্রিটিশ আমল থেকেই প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বর্তমান অবস্থান থেকে কমপক্ষে এক হাজার ফুট পশ্চিমে ছিল এ নদীর গতিপথ। সম্পূর্ণ নদীটি এখন জনসাধারণের জমিতে। স্লুইচগেট নষ্ট ও ড্রেজিং না করায় ঘাঘট এখন রাক্ষসী নদীতে পরিণত হয়েছে। এ পর্যন্ত শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে গেছে। ফসিল জমি গেছে প্রায় ২০০ বিঘা। অসংখ্য গাছগাছালি ও কবরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বাদ যায়নি মসজিদ, মক্তব ও ঈদগাহ মাঠ। আর এখন হুমকিতে আছে মধ্য সাহাবাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শত বছরেরও পুরোনো মিয়ার ভিটা মাজার, জামে মসজিদ, অর্ধশত বসতবাড়ি ও ফসলি জমিসহ ছোট-বড় বিভিন্ন স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ঘাঘট পাড়ের এ অঞ্চলের মানুষজন নিরাপদে ছিল। এরপর থেকে শুরু হয় ভাঙন। বর্ষা এলেই আতঙ্কে থাকতে হয় স্থানীয়দের। প্রতিবছরই হারাতে হয় বাসতবাড়ি, গাছগাছালি, ফসলি জমি ও বাপদাদার কবরসহ নানা স্মৃতি। ২০০৭ সালে এসডিও নামক এক এনজিও ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। কিছুটা দুর্ভোগ কমে এ অঞ্চলের মানুষের। ২০১৫ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন নদীর বাকি অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। চার বছর বেশ ভালোই ছিল মানুষজন।
২০১৮ সালে জুলাইয়ের বন্যায় ভেঙে যায় সেই বেড়িবাঁধের পুরো অংশ। আবারো দেখা দেয় নদীভাঙনের ভয়াবহতা। দ্রুত স্থায়ী সমাধানের আকুতি জানিয়েছেন ঘাঘট পাড়ের বাসিন্দারা।
সর্বানন্দ ইউনিয়নের মধ্য সাহাবাজ গ্রামের ঘাঘট নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ঘাঘট নদী ভাঙতে ভাঙতে সবকিছু শেষ করে ফেলেছে। প্রাইমারি স্কুলটি রক্ষার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, ইউএনও, শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ এমন কোনো লোক নেই যাকে বিষয়টি জানানো হয়নি। কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। স্থায়ী সমাধানে লিখিত অভিযোগও দেওয়া আছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে।
মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সজিব মিয়া বলেন. নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন স্কুল মাঠে এসেছে। অনেকদিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ। নদীতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে স্যাররা খেলতে দিচ্ছেন না। আমাদেরও ভয় লাগে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, নদীর ভাঙন স্কুলমাঠের কাছাকাছি আসায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। বেশ কয়েকদিন ধরে খেলাধুলা বন্ধ। খেললেই ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার বল নদীতে যায়। এছাড়া বাচ্চারাও পড়ে যেতে পারে। নদীভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী সমাধান না করলে যে কোনো মুহূর্তে স্কুলের ভবন দুটি ও শহীদ মিনার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, দ্রুত ওই স্থানে লোক পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। একইসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, এরই মধ্যে ওই স্থানটি পরিদর্শন করেছি। ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। আশা রাখি খুব দ্রুত বরাদ্দ আসবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ওই স্থানে শিগগির ডিওসহ প্রতিনিধি যাবে। খোঁজ নিয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে জিও ব্যাগের জন্য আবেদন করতে বলেছি। আমি সরকারি কাজে দেশের বাইরে আছি। এলাকায় গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ ঘাঘট নদীর ওই এলাকা পরিদর্শন করে স্থায়ী সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।