মনজু হোসেন স্টাফ রিপোর্টার।। উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ভারতীয় সীমান্ত বেষ্টিত। এই জেলার তিন পাশেই ভারত। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে গরুর সাথে মাদক,বাড়ছে করোনা ঝুঁকি। সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা রাতের অন্ধকারে ভারতে প্রবেশ করে তাঁর কাটা কেটে অথবা অন্য কোন উপায়ে ভারতীয় গরুর সাথে মাদক নিয়ে বাংলাদেশে এনে যুব সমাজকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে চোরাকারবারিরা। এই চোরাকারবারিরা রাতের অন্ধকারে ভারতে প্রবেশ করে সীমান্ত ঘেষা ভারতীয় গ্রামগুলিতে কয়েকদিন অবস্থান করার পর তারা গভীর রাতে গরুর সাথে মাদকসহ বাংলাদেশে ঢুকছে। এতে ভারতীয় করোনা ভাইরাস এবং ব্লাক ফাঙ্গাসের সংক্রমনের আশঙ্কা বাংলাদেশে দেখা দিতে পারে বলে জানান অনেকে। এতে সীমান্ত এলাকার সাধারন মানুষ রয়েছে আতংকে। বরষা কালে বৃষ্টির রাতে চোরাকারবারিরা বিজিবি এবং পুলিশ প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গরুর সাথে মাদক নিয়ে আসছে। জেলার বোদা উপজেলার বড়শশি ইউনিয়নের মহিষবাথান, চটিপাড়া, হাটুয়া ডাঙ্গা, কাজিপাড়া, মালকাডাঙা, অমরখানা, কোলোনী, শাখাতীপাড়া, বেরুবাড়ি, নাওতারি, সামের ডাঙ্গা,নূর পাড়া, মায়াপাড়া, বালাপাড়া,সর্দারপাড়া, দেনদাপাড়া গ্রামের সহস্রাধিক নাগরিক এই চোরাকারবারির সাথে জড়িত। এসব এলাকার ভারতীয় সীমান্তে কাটা তাড়ের বেড়া না থাকার কারণে প্রায় বাড়িতে চলছে মাদকের আখরা। শহরের উঠতি বয়সের ছেলেরা প্রতিনিয়ত ওই এলাকায় গিয়ে মাদক সেবন করছে। এসব এলাকা থেকে সারাদেশে মাদক এবং গরু পাচার করা হয়। অভিযোগ উঠেছে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় একটি বড় মাদক ও চোরাকারকবারি সিন্ডিকেট এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিজিবি এবং পুলিশের অভিযানে অনেকে গরুসহ মাদক চোরাকারবারি ধরা পড়লেও আইনের ফাক ফোকওে জেল থেকে বেরিয়ে আসছেন তারা কয়েকদিনের মধ্যে। আবারও শুরু করে মাদকের ব্যবসা। স্থানীয়দের অভিযোগ নাওতারি এলাকার মৃত আব্দুল হাই সুরজ্জামালের ছেলে মানিক হোসেনের নেতৃত্বে ম্যাগনেট আলম, কেলটি, মানিক ইসলাম, নূর শাইদ, শহর আলী, হাইবুল ছুটু, আয়ুব মোল্লা, আমিনুল ইসলাম, অলিয়ার, ডাইগল আশরাফুল, মুরসালিন মধু, আলী, আজগর,আজহার,সলেমান অনেকেই গরু ও মাদক চোরাকারবারির সাথে জড়িত। এদের অনেকের নামে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মানিক হোসেন। তিনি বলেন কোন চোরকারবারিতে আমি জড়িত নই। জানা গেছে এসব এলাকার স্কুলগামী শিশুরাও এখন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন বোদা থানা পুলিশ মাদক নিরোধে যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। তবে আদালত থেকে দ্রুত জামিন পায় মাদক ব্যবসায়িরা। বোদা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ জানান, গত ৬ মাসে অন্তত: তিরিশটি মাদকের মামলা হয়েছে। আসামী গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক। মাদক চোরাকারবারি নিয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। অসংখ্য মামলা হচ্ছে। আসামী ধরা হচ্ছে। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী ইব্রাহিম এলিন জানান, গ্রামে গ্রামে মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। ভারত থেকে অনেকে সচেতনতার অভাবে গরু চোরাকারকারিতে জড়িয়ে পড়ছে। করোনাকালীন সময়ে করোনার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে । প্রশাসনের আরও কঠোর ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন। সদর উপজেলার হাড়িভাষা, চাকলা, রত্নিবাড়ি,বাঙ্গাল পাড়া, বহিতা বোদাপাড়া,মীড়গড় এলাকার উত্তরে আমতলা হয়ে বোদাপাড়া,কাকপাড়া,ভেলকুপাড়া,বকশিগছ, এই এলাকা ভারতীয় সীমান্ত হওয়ায় গরুর সাথে মাদক চোরাকারবারিরা প্রায় সময় রাতে অটো ভ্যান চালকদের নিয়ে গিয়ে গলাকেটে হত্যা করছে। এই উপজেলাতেও রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তেঁতুলিয়া উপজেলার ভূতিপুকুর, বগুলাহাগি,লালগজ, মন্ডলপাড়া, সারিয়াল জোত, চুতরাপাড়া, বাংলাবান্ধা, দর্জিপাড়া সহ আরও কয়েকটি সীমান্ত গ্রাম দিয়ে গরুর সাথে মাদক আসছে বাংলাদেশে। একই ভাবে আটোয়ারি উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্ত গ্রাম দিয়েও ভারতের গরু এবং মাদক চোরাচালান হচ্ছে। এসব চোরাকারবারি রাতের অন্ধকারে ভারতে যাওয়া আসা করছেন । ফলে ভারতীয় স্টেইন করোনা ভাইরাস এবং ব্লাক ফাঙ্গাস যে কোন সময় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাট্যলিয়নের অধিনায়ক ল্যা: কর্নেল খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন গত কয়েকদিন আগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট সংক্রমণের আতঙ্ক হওয়ায় সীমান্ত এলাকার মানুষেরা একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে তাই বিজিবি সতর্কতার সহিত সীমান্তে সবসময় টহলরত রয়েছে। আমরা গরু চোলাচালান নিয়ে ২৪ ঘন্টা তৎপর রয়েছি। বর্তমানে কোন গরু পঞ্চগড়ের সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করতে পারছেনা। আমরা সবধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছি। শুধু গরুই নয় কোন ধরনের মাদক সহ অন্যান্য পণ্যও ঢুকছেনা। ভারতীয় করোনা ভাইরাসা যাতে কোন ভাবে প্রবেশ করতে না পারে এ ব্যপারে আমরা যথেষ্ট সজাগ রয়েছি। নীলফামারী ৫৬ বিজিবির অধিনায়ক ল্যাঃ কর্ণেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বড় শশী এলাকার সীমান্তে কাটা তারের বেড়া নেই। তাই এখানে চোরাচালান একটু বেশি হতো। কিন্তু আমরা বর্তমানে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। তাই চোরাচালান প্রায় শুন্যের কাছাকাছি নেমে এসেছে। বড় শশী এলাকায় বিজিবি সদস্য বাড়ানো হয়েছে। জেলার সবকটি সীমান্তে বিজিবি‘র সদস্যরা টহল দিচ্ছে।