গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত কমিটি নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা চলছিলো বেশকিছুদিন ধরেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায় নির্বাচনকালীন সময়ে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা, এতেই সাবেক এবং বর্তমান কমিটির মাথা ধরেছে।
গত ৯ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত শারদীয় দুর্গাপূজা/২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে বিশেষ সভায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে।
বর্তমান কমিটির আহবায়ক জিতেন্দ্র নাথ সরকার সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট অদক্ষ, পাশাপাশি তিনি নিজেই অভিযোগ করেন পূর্বের কমিটি নতুন কমিটিকে কোন ধরনের সাংগঠনিক সহযোগিতা করছেন না। ১৫ টি ইউনিয়ন কমিটি ও ১ টি পৌর কমিটি নিয়ে সুন্দরগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ।
পূর্বের কমিটি ১০ টি ইউনিয়নের সম্মেলন করলেও সে তালিকা নতুন কমিটিকে দিতে গড়িমসি করছেন সাবেক সভাপতি নিমাই ভট্টাচার্য। আগের করা ১০ টি ইউনিয়ন কমিটি বাদে বাকী ৫ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর কমিটি গঠন করেন বর্তমান আহবায়ক কমিটি।
এদিকে দুর্গাপূজা যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দুই কমিটির বিরোধ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। দুর্গাপূজা/২৩ উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় সাবেকদের অধিকাংশই আসছেন না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সাবেক কমিটির লোকজন জানান কোন প্রকার বর্ধিত সভা না করে পাশাপাশি তাদেরকে কোনকিছু না জানিয়েই গত ২৫/০৭/২৩ তারিখে ২১ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এতে জিতেন্দ্র নাথ সরকার কে আহবায়ক ও পরেশ চন্দ্র বসুনিয়াকে সদস্য সচিব করা হয়। কমিটিতে স্থান পাওয়া আহবায়ক জিতেন্দ্র নাথ সরকার সহ অনেকেই অভিযোগ করেন কমিটির ব্যাপারে তারা কিছুই জানেন না।
এদিকে সাবেক সভাপতি নিমাই ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ বর্মন কে বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, পাশাপাশি ডাকযোগে তাদের কাছে কমিটির কাগজ পাঠানো হয়।
সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় বর্তমান কমিটিতে বেশ-কিছু অদক্ষ লোককে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যাদের সাংগঠনিক দক্ষতা এতোটাই কম যে পুরো উপজেলার পূজা মন্দিরের তালিকা বেশ কয়েকবার সংশোধন করে ১৪৭ টিতে গিয়ে ঠেকেছে। এর পরেও কয়েকটি মন্দির শংকায় রয়েছেন তালিকায় তাদের নাম আছে কি না???
সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন পরিষদ বেশকিছু অনুদান পেয়ে থাকে যার অধিকাংশ নেতারা তাদের পকেটে ভরেন। তাই নির্বাচন পর্যন্ত উভয় কমিটিই চাচ্ছেন শীর্ষ পদ নিয়ে কমিটিতে থাকতে।
বেশকিছুদিন যাবত সাবেক কমিটির লোকজন চাচ্ছেন বর্তমান আহবায়ক কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করতে এতে তাদের নির্বাচনকালীন আয়রোজগার ভালোই হবে।
খোজ নিয়ে আরও জানা যায় সুন্দরগঞ্জে সনাতন সম্প্রদায়ের ভোটারের সংখ্যা আনুমানিক ৫৭,০০০ জন (প্রায়)।
পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা আগেই এই জনগোষ্ঠীর খরচ বাবদ বেশকিছু টাকা বরাবর নিয়ে থাকেন, যার কোন কিছুই সাধারণ সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন জানেন না।
বিভিন্ন মন্দির ও শ্বশ্মানের বরাদ্দ পাবার ক্ষেত্রেও এই নেতাদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
আর বর্তমান আহবায়ক কমিটির আহবায়ক জিতেন্দ্র নাথ সরকার সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট অদক্ষ ও দূর্বল হওয়ায় বেশকিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যে ঘটেও গেছে।
ঘটনা যাই ঘটুক দুই-গ্রুপেরই লক্ষ্য আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নিজেদের শীর্ষপদে থাকা।
এদিকে দরজায় কড়া নারছে শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৩ এ নিয়ে তাদের তেমন কোন মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। তারা এখন পর্যন্ত বলতেই পারছেন না কতটি মন্দির অরক্ষিত। দেয়া হয় নি বিশেষ কোন নির্দেশনা। এ নিয়ে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে চাপা ক্ষোভ থাকলেও শীর্ষ নেতাদের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।
তবে সবাই যেন নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করতে পারে সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশের পক্ষ থেকে একের পর এক মতবিনিময় সভা করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম ও অফিসার ইন-চার্জ কে এম আজমিরুজ্জামান জানান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোন প্রভাব দুর্গাপূজায় পরবে না। ইতোমধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে তিন ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।