প্রতিদিনের বাংলাদেশ:: মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নায়েবে আমীর আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাযা ঘিরে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৪৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ ১১ হাজার ৯০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার দেখায়নি পুলিশ।
বুধবার (১৬ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে মামলাগুলো দায়েরের বিষয় নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মাহাফুজুল ইসলাম।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ছয়টি মামলার পাঁচটির বাদী পুলিশ। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় একটি, চকরিয়া থানায় দুটি ও পেকুয়া থানায় দুটি। এগুলো হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে। আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন চকরিয়া উপজেলায় সংঘর্ষে নিহত মোহাম্মদ ফোরকানের স্ত্রী নুরুচ্ছফা। চকরিয়া থানায় তার করা মামলায় কারও নাম নেই। তবে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি ২ হাজার ৫০০ জন। বাকি ৯ হাজার ৪০০ আসামি পুলিশের করা পাঁচটি মামলার আসামী।
এসপি মাহাফুজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকালে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান জামায়াত সমর্থকরা। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। জামায়াত সমর্থকরা পুলিশের ওপর হামলা করে। বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ২ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে পুলিশ মামলা করেছে।
এই মামলার বাদী ও আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি নন এসপি মাহাফুজুল। তবে কক্সবাজার সদর থানা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ নেওয়াজ বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
কক্সবাজারের এসপি জানান, চকরিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুই মামলার বাদী পুলিশ। আরেকটির বাদী সংঘর্ষে নিহত ফোরকানের স্ত্রী নুরুচ্ছফা। এটি হত্যা মামলা। পুলিশের দুই মামলায় নাম উল্লেখ করা ৭৪ জনসহ ২ হাজার ৫০০ জন করে অজ্ঞাত আসামি ৫ হাজার। ফোরকানের স্ত্রীর করা মামলায় কারও নাম নেই। আজ্ঞাত আসামি ২ হাজার ৫০০।
এই থানায় হওয়া পুলিশের মামলার বাদীর পরিচয় এসপি জানাতে অস্বীকৃতি জানালেও থানা সূত্রে জানা যায়, মামলা দুটি করেছেন চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল ফোরকান।
এসপি মাহাফুজুল জানান, পেকুয়ায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। এতে ১৫১ জনের নাম উল্লেখ করে ১ হাজার ১০০ জন করে ২ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার জানান, থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেছেন।
পেকুয়া থানা সূত্রে জানা যায়, মামলা দুটিরই প্রধান আসামি করা হয়েছে পেকুয়া সদর জামায়াতের আমির ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মঞ্জুকে। এ ছাড়া পেকুয়া উপজেলা জামায়াতের আমির আবুল কালাম ও বারবাকিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদির নাম রয়েছে।
উল্লেখ্য, আল্লামা সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়ে ফেরার পথে পেকুয়ার বারবাকিয়া ও চকরিয়ার চিরিংগা বাজারে লামার চিরিঙ্গা এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওসি, ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসি-ল্যান্ডসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি। সহিংসতার একপর্যায়ে দুর্বৃত্তদের করা গুলিতে নিহত হন এক দোকানী। স্থানীয় ৭ জন আহত হন। এ সময় আহত হয়েছেন দুই থানার ওসিসহ ২০ পুলিশ সদস্যও।