নেত্রকোনা প্রতিনিধি:: কৌশলে বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিয়েছেন তিন ছেলে। শুধু তাই নয়, ছেলের বউ দিয়েছে টাকা চুরির অপবাদও। একপর্যায়ে পেটের তাগিদে তাদের করতে হয়েছে ভিক্ষাও। এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ছাড়তে হয়েছে নিজেদের বাড়ি।
সবকিছু ছেড়ে নদীর পাড়ে শাড়ি আর টিন দিয়ে তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস (৭০) ও বৃদ্ধ মা বেলি রাণী দাস (৬০)। তারা নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধুপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
সরেজমিনে গেলে তাদের কষ্টে জীবনযাপনের এ দৃশ্য চোখে পড়ে। বৃদ্ধ মা বেলি রাণী দাস জানান, চার ছেলেসন্তান নিয়েই ছিল তাদের সংসার। আমার স্বামী সহজ-সরল। সেই সরলতার সুযোগ নিয়ে কৌশলে শেষ সম্বলের ২০ শতাংশ জায়গার ১৮ শতাংশ তিন ছেলে শ্যামল, সাগর ও সজল তাদের নামে লিখে নিয়েছে। সবার বড় ছেলে পরিমল বাবার মতোই সরল হওয়ায় তাকে কিছুই দেওয়া হয়নি। সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর প্রায়ই না খেয়ে থেকেছেন। আবার পেটের তাগিদেও আমাদের দুইজনকে রাস্তায়-রাস্তায় ভিক্ষা করেও খাবার জোগাতে হয়েছে। এরপর একদিন টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ছেলের বউ ঘর থেকে মারধর করে বের করে দেওয়ার কথা বলে। এইসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরেই বাড়ি ছেড়ে এখন বাড়ির সামনে নদীর পাড়ে শাড়ি কাপড় আর টিনের তৈরি ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করছেন।
বেলি রাণী দাস আরও বলেন, ‘তারা আমাকে কয়েকদিন ভাতও দেয়নি। কয়েকদিন পরে ঝগড়া লেগে ছেলের বউ আমাকে মেরে ঘর থেকে বের করে দেয়, চুরির অপবাদ দেয়। এ লজ্জায় বাড়ি ছেড়ে নদীর পাড়ে থাকতাছি, বৃষ্টি হলে ঘর পানিতে ভেসে যায়।’
বাবা সুরেশ চন্দ্র দাস জানান, ‘তিন ছেলে তার টিপ সই চাইলে তিনি দিয়ে দেন। এরপর তিন ছেলে মিলে যা শিখিয়েছে তাই বলেছেন। এভাবেই যে সম্পত্তি তারা নিজেদের নামে লিখে নিয়েছে তিনি বুঝতেই পারেননি।’
বড় ছেলে পরিমল চন্দ্র দাস জানান, ‘তিন ভাই বাবার সব জায়গা তাদের নামে লিখে নেওয়ার প্রায় এক বছর পর তিনি জানতে পেরেছেন। পরবর্তীতে স্থানীয় মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জায়গা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তারা এখনো ফেরত দেয়নি।’
অভিযুক্ত ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাসের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মা-বাবার সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘বাবা-মায়ের সব অভিযোগই মিথ্যা। বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের নামে জায়গা লিখে দিয়েছেন। আর বাড়ি ছাড়া আমরা করেনি। তারাই সেখানে গিয়ে থাকছেন। আমি প্রতি মাসে টাকাও দিচ্ছি। আর বউয়ের দেওয়া টাকা চুরির অপবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।’
এ প্রসঙ্গে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুল আকরাম খান জানান, তিন ছেলে মিলে তাদের বাবার সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নেওয়ার ঘটনাটি সত্যি। আমি তিন ছেলেকে অনেকবার বলেছি কিন্তু তারা কিছুই শুনেনি। ছোট দুই ছেলে খুবই খারাপ। বড় দুইজন বাবা-মাকে দেখাশোনার কিছুটা চেষ্টা করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।