বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উত্তর-দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী মাঠ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের সংঘাত-সহিংসতায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত প্রার্থীদের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সর্বশেষ বুধবার দুপুরে উত্তর উলানিয়া আ’লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম জামাল মোল্লার (প্রতীক নৌকা) ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে এই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে স্থানীয় হর্নি রাস্তার মোড়ে ঘণ্টাব্যাপি সংঘর্ষ হয়। এতে নৌকা প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল মোল্লার ২০ কর্মী-সমর্থক আহত হন। এর পুর্বে কয়েক দফা তার কর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় হামলা চালিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। অনুরুপভাবে দক্ষিণ উলানিয়ায়ও বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন মাঠ নিয়ন্ত্রণে নিতে কাজী আব্দুল হালিম মিলন চৌধুরীর (নৌকা প্রতীক) কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছে। এই হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মেহেন্দিগঞ্জ থানায় একটি মামলা করা হলেও পুলিশ কোনো প্রকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলশ্রুতিতে মেঘনা নদীতীরবর্তী এই দুটি ইউনিয়নে নির্বাচনী সময়সীমা যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে সংঘাত-সহিংসতা, সেই সাথে ঘটছে রক্তপাত।
নৌকা প্রার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদের অনুসারী উত্তর উলানিয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল ইসলাম মিঠু চৌধুরী (ঘোড়া মার্কা) এবং দক্ষিণে রুমা বেগম (আনারস মার্কা) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেচে নিয়েছে। দলীয় সিদ্ধান্তে বাইরে গিয়ে তারা ভোটের মাঠ দখলে নিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এমকি নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাসা-বাড়িতে ভাঙচুরসহ মারধর করছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী দুই প্রার্থী কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, তারা নয়, বরং তাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আ’লীগের প্রার্থীর কর্মীরা। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে পুলিশকে ব্যবহার করে হয়রানিও করা হচ্ছে।
উত্তর উলানিয়া নৌকা প্রার্থী নুরুল ইসলাম জামাল মোল্লার বলেন, গত ২৫ নভেম্বর থেকে তিনিসহ তার কর্মী-সমর্থকেরা ধারাবাহিক হামলার শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন। সর্বশেষ বুধবার স্থানীয় পুর্বষাট্টি গ্রামের প্রচারণা চালানোর প্রাক্কালে পেছন থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীরা তার ওপর হামলা করে। এতে তার ১০ জনের বেশি কর্মী আহত হলে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর পূর্বে একই গ্রামে তার কর্মী নুর মোহাম্মদের বাসায় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। এতে কর্মীর ছেলে ও মেয়ে গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রার্থীর অভিযোগ, হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুফল আসেনি। বরং থানা পুলিশের নিস্ক্রিয়তায় একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে, রক্তাক্ত হচ্ছে কর্মীরা।
অনুরুপ পরিস্থিতি তুলে ধরে দক্ষিণের নৌকা প্রার্থী কাজী আব্দুল হালিম মিলন চৌধুরীও বলছেন, পুলিশের নিরবতায় বিদ্রোহী প্রার্থী বহিরাগতদের এলাকায় নিয়ে এসে সহিংসতা তৈরি করছে। স্থানীয় সাংসদের অনুসারী মেহেন্দিগঞ্জ পৌরসভার চার কাউন্সিলর বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় এসে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে নৌকার কর্মীদের ওপর হামলা করছে। গত ১৫ নভেম্বর টাকা দাখিলের পর তার বাসা-বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে। এবং পুর্ব সুলতানী এলাকায় নদীতীরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয় লুটপাট করেছে। এই দুটি ঘটনায় থানা পুলিশে মামলা করলেও আইনি সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং পুলিশের উপস্থিতিতে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে।
স্থানীয়রা বলছে, দুটি ইউনিয়নের নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিপরিতে সংঘাত ততই বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘটছে রক্তপাত। এছাড়া প্রতিনিয়ত বহিরাগত সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহাড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ইউনিয়নবাসী। আগামী ১০ ডিসেম্বর ভোটের আগে দুটি ইউনিয়নে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলেও পুলিশের ভুমিকা লক্ষ্যণীয় নয়।
তবে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবিদুর রহমান বলছেন, পুলিশ সার্বক্ষণিক দুটি ইউনিয়নের দৃঢ়তার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। এবং নৌকা প্রার্থীর মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি যে কোনো প্রকার সংঘাত-সহিংসতা রোধে শক্তপোক্ত অবস্থানে আছে।